• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এমপিও অনুমোদন হারাচ্ছে  ১২২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

এমপিও অনুমোদন হারাচ্ছে ১২২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

এমপিও অনুমোদন হারাচ্ছে ১২২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০১৮

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান রাখার যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করে সরকারি অনুদান (এমপিও) ও অনুমোদন-স্বীকৃতি বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় গত ৬ মে। সারা দেশের তিন হাজার ৪১৫টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৫৫৮টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। ফলাফলে দেখা যায়, মোট ১২২ প্রতিষ্ঠানের একজনও পাস করেনি পরীক্ষায়। এর মধ্যে সাধারণ আট বোর্ডের অধীন ১৬টি ও মাদরাসা বোর্ডের অধীন ৯৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ফল প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রী সব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠক করে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে বোর্ডগুলো। গত ১৩ মে মাদরাসা বোর্ডের অধীন শতভাগ ফেল করা স্কুল কর্তৃপক্ষকে শোকজ করে ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। সাধারণ বোর্ডের অধিভুক্ত স্কুলগুলোর বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

শতভাগ ফেল করা মাদরাসার মধ্যে ১৯টি এমপিওভুক্ত। সেগুলো হচ্ছে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিলাসী মদিনাতুল উলুম বালিকা আলিম মাদরাসা, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় খামা বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল বখশিয়া দাখিল মাদরাসা, নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের শাজাহানপুর ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা, নওগাঁর পত্নীতলায় বড় বিদিরপুর দাখিল মাদরাসা, ছোট মাহারানদি টেকনিক্যাল দাখিল মাদরাসা, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বেড়েবাবাড়ির সিনিয়র আলিম মাদরাসা, শিবগঞ্জের মেদিনিপাড়া মোজাদ্দিদিয়া দাখিল মাদরাসা, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ঝিনাইকুরি ওসমানিয়া দাখিল মাদরাসা, যশোর কেশবপুরের প্রতাপপুর দাখিল মাদরাসা, সাতবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা, ইমান নগর এম বি জি দাখিল মাদরাসা, বরিশালের উজিরপুরে মুন্সির তালুক বালিকা আলিম মাদরাসা, পিরোজপুরের নেসারবাদ মুজাদ্দেদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, পুটয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, পটুয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইলের চাতিলা সেফালিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা এবং মাগুরার মহম্মদপুরের রিজিয়া বুবিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিংবা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অধিকাংশ মাদরাসার অনুমোদন, স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। সৃষ্ট পদ অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৬ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন। এর বাইরেও অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা।

একাধিক শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বাবদ সরকারি ফান্ড থেকে মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে না। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দু-একজন শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ পাস না করায় শতভাগ ফেলের সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর চাইতে শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি।

এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, শতভাগ ফেল করা ৯৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের শোকজ করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে না। এ কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে মাত্র একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। আমরা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করছি। তাদের আর পুষে রাখা হবে না।’

‘ওইসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও স্বীকৃতি বাতিল এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সব সুবিধা বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে’ বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, সাধারণ আট বোর্ডের ১৬টি বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শতভাগ অকৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ঢাকা বোর্ডের অধীনে তিনটি স্কুল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে গাজীপুর কাপাসিয়ার কিরাটি পূর্বপাড়া ড. এ রহমান গার্লস হাই স্কুল, ফরিদপুর মধুখালীর গয়েশপুর বকশিপুর হাই স্কুল এবং জামালপুর সরিষাবাড়ির গুইঞ্চা আওনা এসইএসডিপি হাই স্কুল। ওই তিন স্কুলের ৩০ শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখার যৌক্তিকতা কতটুকু, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা দ্রুত শূন্য পাসের কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ করব। উপযুক্ত জবাব না পেলে অনুমোদন বাতিলেরও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads