• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রাথমিকে ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষক

লোগো প্রথামিক শিক্ষা অধিদফতর

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

প্রাথমিকে ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষক

একদল আরেকদলকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৮

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে দলাদলি। প্রধান শিক্ষকরা কলহে লিপ্ত থাকায় সহকারী শিক্ষকদের পোয়াবারো। তাদের করতে হয় না জবাবদিহিতা। চলছেন ‘ফ্রিস্টাইলে’। সহকারী শিক্ষকরা শুধু সকালে স্কুলে যান আর আসেন। মাঝখানে নোট-গাইডের সহায়তায় কিছুটা সময় পাঠদান করেন। সব মিলিয়ে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা লাটে ওঠার উপক্রম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এই ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষকরা হলেন- বিসিএস নন-ক্যাডার, সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত, আত্তীকরণকৃত, পদোন্নতিপ্রাপ্ত, চলতি দায়িত্বে নিয়োগকৃত ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষক নিয়ে মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নানা দল-উপদলে বিভক্ত। যিনি যেভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি সেভাবেই প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন নাম দিয়ে সমিতি নামের ‘দোকান’ খুলে বসেছেন। এর প্রভাব পড়ছে পাঠদান কার্যক্রমে। প্রাথমিক শিক্ষকদের এমন দলাদলিতে গজিয়ে ওঠা ‘কেজি স্কুলগুলোর’ পোয়াবারো। এতে মার খাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চললেও তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কোথাও এক-আধটু সমস্যা হলেও তা কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা মিটিয়ে ফেলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে একটা সময় সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো। পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকেও প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি হতো। কিন্তু আইনি জটিলতায় এই দুই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। একপর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। এতে প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগবিধিতে পরিবর্তন আসে। বদলে যায় সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়টিও। এর সঙ্গে যোগ হয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। আর এসব ধারার কোনোটাই যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োগ করা যায় না সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চালানো হয়।

একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষক নিয়ে মাঠে বহু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে একদল আরেকদলের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই বলে। আর এর প্রভাব পড়ে বদলিসহ নানা কর্মকাণ্ডে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পরই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) নন-ক্যাডার সুপারিশ পাওয়া হাজারখানেক প্রার্থীকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা মাঠ পর্যায়ে ‘বিসিএস প্রধান শিক্ষক’ হিসেবে পরিচিত। বেশ ক’বছর সরাসরি নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষকও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তাদেরকে বলা হয় ‘সরাসরি হেড টিচার’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করেছেন। ফলে এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের চাকরিও সরকারি হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বলা হচ্ছে ‘আত্তীকৃত হেডমাস্টার’। কিছু শিক্ষক রয়েছেন, যারা আইনি জটিলতার বাইরে গিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের বলা হয় ‘প্রমোশন পাওয়া হেডমাস্টার’। বর্তমানে আইনি জটিলতার কারণে সরকারি প্রাথমিকে পদোন্নতি বন্ধ আছে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পিএসসির বিধি অনুযায়ী যোগ্য সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্বে (চ. দা.) প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। তাদের নাম ‘চ. দা. হেডমাস্টার’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, মোটাদাগে এই ছয় ধরনের প্রধান শিক্ষক নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এদের মধ্যে একটি ফাঁক রয়েছে। এ কারণে তারা একে অন্যকে সহ্য করতে পারছেন না। এতে পাঠদান কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। তার মতে, পিএসসি থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের পড়াশোনা বেশি। ফলে এদের মধ্যে নেতৃত্বসহ অন্যান্য গুণও বেশি। এই বেশি থাকা গুণই সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া চলতি দায়িত্ব পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাও চলছে। ফলে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১৪ সালের মার্চে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার ছেলে চাই। সেই সোনার ছেলে গড়ার কারিগর শিক্ষকরা। সত্যিকার অর্থে সোনার ছেলেদের হাতেই আমরা দেশের দায়িত্ব দিয়ে যেতে চাই। শিক্ষার্থীদের ভালো-মন্দ শেখানোর পবিত্র দায়িত্ব আপনাদের।’ কিন্তু শিক্ষকরা সেই দায়িত্ব ভুলে গেছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads