• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শিক্ষা আইন নিয়ে চলছে ‘সাপলুডু’ খেলা

সাত বছরেও এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

শিক্ষা আইন নিয়ে চলছে ‘সাপলুডু’ খেলা

সাত বছরেও না হওয়ায় আবার প্রথম থেকে খসড়া প্রণয়নের সিদ্ধান্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৮

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন নিয়ে চলছে ‘সাপলুডু’ খেলা। গত সাত বছরেও এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ অসম্পূর্ণ এই আইনটিই অনুমোদনের জন্য তিনবার মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছিল মন্ত্রণালয় এবং প্রতিবারই সেটি ফেরত এসেছে। তারপরও শিক্ষা হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১১ সাল থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ আইনের খসড়া প্রণয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারছে না। নানা রকম পর্যবেক্ষণসমেত আইনটি মন্ত্রিসভা থেকে বার বার ফেরত আসার পর আবার নতুন করে কাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়। অথচ গত সাত বছরে অসংখ্য বৈঠক, সেমিনারসহ নানা প্রক্রিয়ায় শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি হলেও এতে থেকে গেছে নানা অসঙ্গতি। শেষ পর্যন্ত নতুন নাম ও বিষয়বস্তু নিয়ে ফের আইনটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, এতদিন শিক্ষা আইনের যে খসড়া করা হয়েছিল তা এবার পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর নতুন নাম হবে ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’।

জানতে চাইলে এ-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাভেদ আহমেদ বলেন, এবার সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সরকারের বাকি মেয়াদে তা সম্ভব কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র তিন মাস ১৭ দিন আছে। এই সময়ের মধ্যে আইনটি সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। এতদিনেও কেন করা গেল না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছিল। বেশ কিছু পর্যবেক্ষণসহ ফেরত এসেছে। তিনি বলেন, আসলে শিক্ষা নিয়ে নানা আইন রয়েছে। এখন আমাদের সেগুলোকে সমন্বয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাই এখন যেটা হচ্ছে তার নাম ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’। আমাদের পর্যায়ে কাজ শেষ হলে তা ফের নানা ধাপ অতিক্রম করে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, খসড়া শিক্ষা আইনটি অনুমোদনের জন্য গত বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছিল। এর আগে এটি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে পর্যালোচনা হয়। মন্ত্রিসভা থেকে ১৩টি পর্যবেক্ষণসহ খসড়াটি গত মে মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ফেরত যায়। এরপর ওই পর্যবেক্ষণের ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতর-অধিদফতরের মতামত চাওয়া হয়।

মূলত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, খসড়ায় ব্যাপক অসামঞ্জস্যতা, বৈপরীত্য ও বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি থাকায় এটি বার বার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হচ্ছে। রহস্যজনক কারণে বিভিন্ন পক্ষকে খুশি করার চেষ্টা খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারায় স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, ফেরত আসা শিক্ষা আইনের খসড়ায় প্রশ্নফাঁস, কোচিং বাণিজ্য, নোট-গাইডসহ নানা ইস্যু আছে। এসব বিষয়ে একদিকে যেমন প্রচলিত আইন রয়েছে, অন্যদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বিধান করার প্রস্তাবও এসেছে। এ নিয়েও ‘বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আইন-১৯৯০’ আছে। এভাবে শিক্ষার স্তর, পাঠ্যবই, এমপিও, শিক্ষক নিয়োগসহ নানা দিক আছে আইনটিতে। এর প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আইন, বিধি ও নীতিমালা আছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান আইনের সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনের সম্পৃক্তকরণের ক্ষেত্রে নানা অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলার উদ্দেশ্যে গত ২৬ এপ্রিল তৃতীয় দফা বৈঠকে বসেও ‘আইনের খসড়া পরীক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি’ কোনো সুপারিশ করতে পারেনি। বরং খসড়াটির বিভিন্ন ধারা-উপধারা পর্যালোচনা করে কমিটি নানা রকম ত্রুটি, পরস্পরবিরোধী তথ্য এবং ভাষাগত সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারা খুঁজে পেয়ে পর্যবেক্ষণসহ ফেরত পাঠায়।

এদিকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের কয়েকটি ধারা-উপধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। তারা বলছে, শিক্ষা আইনের খসড়ায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের ক্ষেত্রে যে আইন করা হচ্ছে তাতে শিক্ষাব্যবস্থার অবনতি ঘটবে। লেখক, প্রকাশক ও শিক্ষার্থীরা তাদের মুক্তচিন্তা চর্চায় বাধা পাবেন। শিক্ষা আইন না হওয়ার পেছনে এদেরও ভূমিকা আছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads