• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ছন্দে ফেরেনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

পুলিশের অভিযানের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বেশি

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

ছন্দে ফেরেনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০১৮

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রয়ে যাওয়ায় এখনো বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। পরিবেশ কিছুটা ‘গুমট’। এ অবস্থায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেভাগেই ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত সপ্তাহে বন্ধ ছিল, সেগুলোতে তড়িঘড়ি করে শুক্র এবং শনিবারে পরীক্ষা নিয়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের পর পুলিশের অভিযানের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বেশি। কারণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষে গত ৬ আগস্ট থেকে ক্লাসে যোগ দিয়েছে। কিন্তু ওইদিনই রামপুরা, বসুন্ধরা ও ধানমন্ডি এলাকায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সারা দেশে ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অধিকাংশেই পরিস্থিতি থমথমে থাকায় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

গত সপ্তাহ থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী গ্রেফতার হওয়া ২২ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা স্থগিতসহ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি গতকাল শনিবার তাদের ওয়েবসাইটে জরুরি বার্তা প্রকাশ করে বলেছে, আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হওয়া ক্লাস-পরীক্ষা ঈদের ছুটির পর পুষিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া আন্দোলনের কারণে নর্থসাউথের সাঈদুর রহমান পায়েল নামে এক শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামি হয়েছে। আশরাফুল ইসলাম আকিব নামের আরেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত।

আগামী ২০ আগস্ট থেকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ঈদের ছুটি হওয়ার কথা। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ রোববার থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ থাকবে। আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ক্লাস চললেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল না। এ কারণে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে নেওয়া হয়েছে। শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস স্থগিত থাকলেও গত দু’দিনে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হয়েছে। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি ঈদের ছুটির পর পরীক্ষা নেবে। অন্যান্য ইউনিভার্সিটিতেও প্রায় একই অবস্থা।

জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, এখন আর কোনো সমস্যার কথা শুনছি না। তবু আমরা সতর্ক আছি। আটক শিক্ষার্থীদের ক্ষমা করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন কোনো ইস্যু তৈরির সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। আটক সব শিক্ষার্থীর মুক্তির ব্যবস্থা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান তিনি।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমএস শহিদুল ইসলাম বলেন, সেই ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হচ্ছে না। এ কারণে আজ রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত। একই সঙ্গে আজ সিন্ডিকেট সভা হবে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত সবশেষ তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, ট্রান্সপোর্ট কম থাকায় নর্থ সাউথে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। এ কারণে ক্লাসটেস্টও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি কয়েক দিন আগে বসুন্ধরা এলাকায় পুলিশ ‘ব্লক রেইড’ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসছে না।

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আবুল বাশার খান বলেন, ক্লাস চললেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আখতার আহমেদ বলেন, আপাতত কোনো ঝামেলা নেই। আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএমএম সফিউল্লাহ জানান, শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম থাকলেও ক্লাস হয়েছে। এজন্য ল্যাবরেটরি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. আবদুল মতিন বলেছেন, এই মুহূর্তে কোনো সমস্যা না থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইউছুফ মাহবুবুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। আমরা চাই, যা হওয়ার হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ইয়াসমিন আরা রেখা বলেছেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী না বুঝেই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল। এখন আন্দোলন না হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে দাঁড়ান এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তারা আর আন্দোলনে যুক্ত হবে না।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগে আন্দোলনে যেত না। ভ্যাট প্রত্যাহার আন্দোলন সফল হওয়ার পর তারা এখন প্রায়ই রাস্তায় নামে। এরপর তারা নামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে। সবশেষ তারা যুক্ত হয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে। তাদের প্রতিটি আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রূপ নেয়। যার কোনোটিতেই শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

সূত্র মতে, ২০১৫ সালের জুন মাসে উচ্চশিক্ষায় ধার্যকৃত ১০ শতাংশ ভ্যাট বাতিলের দাবিতে ‘নো ভ্যাট’ স্লোগানে প্রথমে ঢাকার রাস্তায় নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত মাসের শুরুতে রাস্তায় নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী। আর গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুর জের ধরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন শুরু হয়। তৃতীয় দিনে এসে ছোটদের আন্দোলন চলে যায় বড়দের নিয়ন্ত্রণে। এতে যোগ দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর একের পর এক উসকানি ও গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। একাধিক স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। ‘ধর্ষণ ও গুমের’ গুজবের সূত্র ধরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা করা হলে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। আক্রান্ত হন গণমাধ্যম কর্মীরাও। গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনে উসকানি দেওয়ায় বেশ কয়েকটি মামলা করে পুলিশ। এসব মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থী এখন কারাগারে। শিক্ষাকরা এদের ক্ষমা করার আবেদন জানিয়েছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আমি ক্ষমা করার কে? আমরা কাউকে মুক্তি দেওয়ার অধিকার রাখি না। এরপর থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুমট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads