• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
১০ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ২৭১ কলেজের অধ্যক্ষ

লোগো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

১০ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ২৭১ কলেজের অধ্যক্ষ

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ১৯ আগস্ট ২০১৮

সদ্য সরকারি হওয়া ২৭১ কলেজ এখন থেকে কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে ১০ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন অধ্যক্ষরা। গত সপ্তাহে বেশ কয়েকজন অধ্যক্ষ ঢাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘুরে গেলেও কোনো দিকনির্দেশনা পাননি। এতে সঙ্কটে পড়েছেন তারা। কারণ সরকারি হয়ে যাওয়ায় তারা এখন থেকে গভর্নিং বডির কথামতো চলতে পারবেন না। আবার কীভাবে তারা চলবেন, সে বিষয়ে সরকারও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছে না। ফলে কলেজগুলোর প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে।

এ ২৭১টি কলেজে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পেতে আপাতত কোনো সমস্যা না হলেও নন-এমপিও, খণ্ডকালীন ও অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ কলেজ কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা ছাড়া তাদের বেতন-ভাতা দিতে পারবে না। আজকালের মধ্যে এ জটিলতার নিরসন না হলে কলেজ থেকে নন-এমপিও শিক্ষকরা ঈদুল আজহার আগে কোনো টাকাই পাবেন না।

অধ্যক্ষরা বলেছেন, খুব দ্রুত অন্তত ১০টি প্রশ্নের উত্তর তাদের জানা দরকার। বিশেষ করে নন-এমপিও, খণ্ডকালীন ও অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের বেতন কীভাবে পরিশোধ করা হবে। কারণ শিক্ষকদের বেতন-বোনাস কলেজের আয় থেকে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু জাতীয়করণ হওয়ায় এসব কলেজের আয় সরকারি কোষাগারে জমা রাখার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি হওয়ার আগে গভর্নিং বডির সভাপতির স্বাক্ষরে কলেজগুলো দৈনন্দিন হিসাব পরিচালনা করত। কিন্তু গত ৮ আগস্ট থেকে সরকারি হওয়ার পর গভর্নিং বডি অকার্যকর হয়ে থাকলে কলেজের আর্থিক কার্যক্রম এখন থেকে কার তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত হবে?

অধ্যক্ষরা বলছেন, সরকারি হওয়ার পর গভর্নিং বডি মূলত আর থাকে না। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা না দেওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া এখন কার স্বাক্ষর কিংবা নির্দেশে কলেজগুলো পরিচালিত হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। কলেজের জন্য আলাদা খাতওয়ারী তহবিল স্থানান্তরিত হবে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা বোনাস কোন খাত থেকে পাবেন? আত্তীকরণের সময় শিক্ষকদের নিয়োগবিধি কী হবে? শিক্ষক-কর্মচারীরা কীভাবে বেসরকারি থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাবেন- এডহক না অন্য কোনো উপায়ে? এসবের পাশাপাশি আরো কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি হয়ে উঠেছে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অধ্যক্ষদের এসব প্রশ্নের জবাব জানানোর জন্য গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে একটি বৈঠক হলেও তাতে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি হওয়া কলেজগুলোর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আত্তীকরণের আগ পর্যন্ত এমপিওর টাকা পেয়ে যাবেন। নন-এমপিও শিক্ষকদের টাকা কলেজ ফান্ড থেকে দেওয়া হতো। কিন্তু ফান্ডের টাকা এখন থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজের আয় খরচও করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে কলেজ থেকে নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধের কোনো সুযোগ থাকছে না। তবু কোনো অধ্যক্ষ যদি আগের মতো কলেজ ফান্ড থেকে নন-এমপিও কিংবা অনার্স শিক্ষকদের বেতন দেন, তাহলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের একজন কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, ডিজি স্যারের কাছে নির্দেশনা চাইতে আসছিলাম। কিন্তু স্যার যা বলেছেন, তা শুনে কলেজ ফান্ডের টাকা সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার আগ পর্যন্ত আর খরচ করব না। তিনি বলেন, আমি এখন টাকা খরচ করলে পরে দুদক ধরবে। কাজেই সরকার যখন যা বলে তখন তা করব।

গত ৮ আগস্ট দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের সরকারি আদেশ (জিও) জারি হয়। সরকারি হওয়া কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা জেলার ৪টি, মানিকগঞ্জের ৪টি, নারায়ণগঞ্জের ৩টি, মুন্সীগঞ্জের ৩টি, গাজীপুরের ৩টি, নরসিংদীর ৪টি, রাজবাড়ীর ২টি, শরীয়তপুরের ৪টি, ময়মনসিংহের ৮টি, কিশোরগঞ্জের ১০টি, নেত্রকোনার ৫টি, টাঙ্গাইলের ৮টি, জামালপুরের ৩টি, শেরপুরের ৩টি, চট্টগ্রামের ১০টি, কক্সবাজারের ৫টি, রাঙামাটির ৪টি, খাগড়াছড়ির ৬টি, বান্দরবানের ৩টি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর একটি করে, কুমিল্লার ১০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি, চাঁদপুরের ৭টি, সিলেটের ৯টি, হবিগঞ্জের ৫টি, মৌলভীবাজারের ৫টি, সুনামগঞ্জের ৮টি, রাজশাহীর ৭টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২টি, নাটোরের ৩টি, পাবনার ৭টি, সিরাজগঞ্জের ৩টি, নওগাঁর ৬টি, বগুড়ার ৬টি, জয়পুরহাটের একটি, রংপুরের ৭টি, নীলফামারীর ৪টি, গাইবান্ধার ৪টি, কুড়িগ্রামের ৭টি, দিনাজপুরের ৯টি লালমনিরহাটের ৩টি, ঠাকুরগাঁঁওয়ের ১টি, পঞ্চগড়ের ৪টি, খুলনার ৫টি, যশোরের ৫টি, বাগেরহাটের ৬টি, ঝিনাইদহের একটি, কুষ্টিয়ার ২টি, চুয়াডাঙ্গার ২টি, সাতক্ষীরার ২টি, মাগুরার ৩টি, নড়াইলের একটি, বরিশালের ৬টি, ভোলার ৪টি, ঝালকাঠির ৩টি, পিরোজপুরের দুটি, পটুয়াখালীর ৬টি, বরগুনার তিনটি রয়েছে। এ ২৭১টি বেসরকারি কলেজ সরকারি হওয়ার পর দেশে মোট সরকারি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৯৮টি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads