• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
২৭১ কলেজের গভর্নিং বডি বাতিলের সিদ্ধান্ত

লোগো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

২৭১ কলেজের গভর্নিং বডি বাতিলের সিদ্ধান্ত

কলেজ ফান্ডের টাকা সরকারি কোষাগারে জমার নির্দেশ

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২০ আগস্ট ২০১৮

সদ্য সরকারি হওয়া ২৭১ কলেজের পরিচালনা পর্ষদ (গভর্নিং বডি) ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন নিয়মে জেলা পর্যায়ের কলেজগুলোতে ডিসি এবং উপজেলা পর্যায়েরগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের প্রতিনিধি হয়ে প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে নেবেন। সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষ জেলা প্রশাসক অথবা ইউএনও’র স্বাক্ষর নিয়ে দৈনন্দিন খরচ চালাতে পারবেন। কোনো অবস্থাতেই কলেজ ফান্ডের টাকা অন্য কোনো খাতে ব্যয় করতে পারবেন না তারা। কলেজ ফান্ডের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার পাশাপাশি এর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাবও সংরক্ষণ করতে হবে অধ্যক্ষদের। গতকাল রোববার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালকের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটি নির্দেশনা আকারে ঈদের পর কলেজগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

সরকারি হওয়া কলেজগুলো এতদিন গভর্নিং বডির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হতো। এতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর পাশাপাশি নন-এমপিও, অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষকরাও বেতন পেতেন। এ ছাড়া নির্ধারিত বেতনের বাইরেও কলেজ ফান্ড থেকে শিক্ষকদের বিশেষ ভাতা দেওয়া হতো। এখন কলেজগুলো সরকারি হয়ে যাওয়ায় পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের টাকা সরকার দেবে। জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে অধ্যক্ষ শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে পারবেন। নন-এমপিও, অনার্স ও মাস্টার্সের জন্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা আপাতত কলেজ ফান্ড থেকে বেতন-ভাতা বাবদ কোনো টাকা পাবেন না। ভবিষ্যতে যদি তারা আত্তীকৃত হতে পারেন তবেই সরকারি বেতন পাবেন।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারি হওয়া কলেজগুলোর গভর্নিং বডি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে অধ্যক্ষরা দৈনন্দিন হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন। আর নন-এমপিও, অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষক-কর্মচারীদের জিও জারির দিন হতে কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা দেওয়া যাবে না। এসব নির্দেশনা দিয়ে ঈদের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। গত ১২ আগস্ট (৮ আগস্ট থেকে কার্যকর) উপসচিব নাছিমা খানমের স্বাক্ষরে সারা দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করার আদেশ জারির পর আর্থিক বিষয় কীভাবে পরিচালিত হবে, নন-এমপিও শিক্ষকদের কলেজ তহবিল থেকে বেতন-বোনাস দেওয়া যাবে কি না- এমন প্রশ্ন নিয়ে ঘুরছেন অধ্যক্ষরা। সরকারি হওয়ার আগে গভর্নিং বডির নির্দেশে কলেজগুলো পরিচালিত হতো। শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকৃত না হওয়া পর্যন্ত গভর্নিং বডি সচল থাকবে কি না, কীভাবে চলবেন, সে বিষয়ে সরকার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছে না বলেও অধ্যক্ষরা জানিয়েছিলেন। ফলে কলেজগুলোর প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে একধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে।

নতুন সরকারি হওয়া কলেজ শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বহু কলেজ নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তবে অনার্সের প্যাটার্ন-বহির্ভূত এবং নন-এমপিও শিক্ষকরা যাতে আত্তীকরণের আগ পর্যন্ত কলেজ থেকে বেতন পান সেজন্য জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির এক প্রতিনিধিদল ঈদের পর মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করবে। 

গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি কলেজ শাখায় গিয়ে দেখা যায়, একজন উপসচিবের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে স্কুল-কলেজ সরকারি করার নথিপত্র তন্নতন্ন করে ঘাঁটছেন। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব নাছিমা খানম বলেন, সদ্য সরকারি হওয়া কলেজের আর্থিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং অধ্যক্ষকে দেওয়া হবে। উভয়ের যৌথ স্বাক্ষরে আর্থিক বিষয় পরিচালিত হবে। জিও জারির পর কোনো শিক্ষককে কলেজ তহবিল থেকে বেতন বা বোনাস দেওয়া যাবে না। চাকরি আত্তীকৃত হলে তারা বেতন বোনাস পাবেন। কলেজ সরকারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষক এসব সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে আবেদন করেননি। আমরা আত্তীকৃত বিধিমালা ও বেসরকারি কলেজ সরকারি হওয়ার পর কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা পর্যালোচনা করে একটি নির্দেশনা প্রস্তুত করছি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads