• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থগিত

শিক্ষা ভবন

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থগিত

দারুলের ৩ হাজার শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ৩০ আগস্ট ২০১৮

অসংখ্য শাখা (আউটার) ক্যাম্পাসের মাধ্যমে সনদ বিক্রিসহ নানা অভিযোগে আদালতের আদেশে বন্ধ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা দিয়ে মঙ্গলবার বিকালে জারি করা আদেশ ২৪ ঘণ্টার মাথায় গতকাল বুধবার বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় তিন হাজার শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না।

মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখা-৩ থেকে উপসচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত জারি হওয়া আদেশে বলা হয়েছিল, ‘মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্জিত সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং উক্ত সনদের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর গ্রহণ করবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হলো।’

বুধবার সকালে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি প্রায় সব কয়টি জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে প্রচার হয় ‘আদালতের রায়ে বন্ধ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’ এর পর এ বেনজির আদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের নজরে আসে। এদিন সকালে তিনি অফিসে এসেই মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার সব কর্মকর্তাকে ডেকে নেন নিজ দফতরে। দারুলের সেই নথি দেখার পাশাপাশি আদালতের আদেশের কপিও দেখেন। একপর্যায়ে সেই আদেশ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দেন। দুপুরের পর নথির মাধ্যমে তিনি সেই সিদ্ধান্ত ফের জানান।

জানতে চাইলে সোহরাব হোসাইন বাংলাদেশের খবরকে জানান, দারুল ইহসানের সনদের বৈধতা দিয়ে যে আদেশ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়েছিল, সেটি স্থগিত করা হয়েছে। কেন করা হয়েছে- জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করছি আদালতের রায়ের ভাবানুবাদ ঠিকভাবে তারা বুঝতে পারেননি। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। তবে আদালতের রায়ের পুরো বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা নথিটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদকে বৈধতা দেওয়ার পেছনে রয়েছেন সনদ বিক্রির সঙ্গে জড়িত একটি গ্রুপ এবং মাউশির কয়েকজন কর্মকর্তা। এতে কিছু অনিয়মও হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এ বিতর্কিত কাজটি হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ ও তার বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে। আদালতের রায়ের উপজীব্য বুঝতে না পেরে সরাসরি সনদের বৈধতা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘না বুঝে’ কিংবা কোনো সুবিধার বিনিময়ে কাজটি করা হয়েছে কি না, তা জানা দরকার। বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা দিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ মঙ্গলবার বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন ‘দীর্ঘদিন ধরে প্রায় তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছিল না মাউশি। আমাদের এ সিদ্ধান্তের ফলে এসব শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন।’ গতকাল বুধবার আদেশটি স্থগিত হওয়ার পরও উচ্ছ্বসিত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি গতকালও উচ্ছ্বসিত ছিলাম, আজও আছি। যা ঘটেছে তা কিছুই না, নাথিং।’ তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার আদেশ জারি হয়েছে। বুধবার স্থগিত হয়েছে। প্রশ্ন এসেছে আদেশ জারির আগে আমরা কেন আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত নিলাম না। আগে নিইনি, নিলে ভালো হতো। তাতে কোনো সমস্যা দেখছি না। এখন আমরা মতামত নেব। মতামত নেওয়ার পর হয়তো আবার হবে। সিম্পল ইকুয়েশন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১০ জুলাই মন্ত্রণালয় ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) কাছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতার বিষয়ে জানতে চায়। ২৫ জুলাই ইউজিসির কর্মকর্তারা মতামত দিয়ে চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিলের রায় বহাল রেখে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি রায় দিয়েছেন। তাতে পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে দারুল ইহসান কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ে পড়ে না।’ এখন সনদের বৈধতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার পর প্রায় তিন হাজার বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীর এমপিওভুক্তি আটকে যায়। মঙ্গলবার জারি করা আদেশে শুধু ওই শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসে। বুধবার আদেশটি স্থগিত হওয়ায় দারুল ইহসানের সনদ দিয়ে এখন নতুন করে কেউ এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না।

জানা গেছে, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করতে বলেন। এই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশও দেওয়া হয়। আদালতের আদেশের পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়। রায় প্রকাশের পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি আটকে দেয় মাউশি। জটিলতা নিরসনে মাউশি গত বছরের ১২ অক্টোবর রায়ের আগে অর্জিত সনদধারীদের গ্রহণযোগ্যতা দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে চিঠি দেয়। সম্প্রতি বদলি হওয়ার মাউশির উপপরিচালক (মাধ্যমিক) নিজ উদ্যোগে এ চিঠি দেন। চিঠি আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দারুল ইহসানের সনদের বৈধতার ব্যাপারে মতামত চায় ইউজিসির কাছে। কমিশন পাশ কাটিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বৈধতার বিতর্কিত এ আদেশ জারি করার ২৪ ঘণ্টার মাথায় তা স্থগিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

ইউজিসি জানায়, ২০০৬ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়কে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখনই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর সব কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো শাখাতেই ভর্তি না হওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সনদ নিয়েছেন। চূড়ান্ত বন্ধের আগে ১৩৫টি ক্যাম্পাসে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিলেন। এর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে এলএলবি কোর্সের সনদ নিয়ে প্রতারিত হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। তারা আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাননি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads