• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সিলেটের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হাইকোর্ট মানছে না

প্রতীকী ছবি

শিক্ষা

সিলেটের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হাইকোর্ট মানছে না

  • আবু তাহের চৌধুরী, সিলেট
  • প্রকাশিত ৩১ আগস্ট ২০১৮

সিলেটের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে বাড়তি ফি আদায় করছে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০১৭ সালের মে মাসে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে প্লে গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি, সেশন ফি, একাডেমিক ফি বা অন্য কোনো নামে ফি আদায় করা যাবে না মর্মে রায় দিয়েছিলেন। সিলেটের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামে ফি আদায় করেই যাচ্ছে।

আদালতের আদেশে আরো বলা হয়, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে এবং সে কমিটিতে অভিভাবক প্রতিনিধি রাখতে হবে। কিন্তু সিলেটের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে এ আদেশও বাস্তবায়ন করা হয়নি। পৃথক দুটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হওয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্কুলগুলোর বিষয়ে ওই রায় দেন।

অভিভাবকদের অভিযোগ, আনন্দনিকেতন স্কুল, সিলেট গ্রামার স্কুল, রাইজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বিভিন্ন নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ফি আদায় করছে। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মাহবুব চৌধুরী, সৈয়দ বাহারুল ইসলাম রিপন, আখতার আহমদ, কয়েছ উদ্দিন আহমদ, নাদিম নেওয়াজ প্রমুখ জানান- ‘হাইকোর্টের কোনো নির্দেশনাই মানছে না সিলেটের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো। তারা অবৈধভাবে বার্ষিক ফি, বিবিধ ফি, এমনকি নতুন শ্রেণিতে ওঠার পর (শ্রেণি পরিবর্তন) সেশন ফিও নিচ্ছে।’

এদিকে স্কুলগুলোর এমন অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি বছরের ২২ মে সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলজার আহমদ খান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘হাইকোর্টের যাবতীয় নির্দেশনা অনুসরণ ও বাস্তবায়নের জন্য’ নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। পরে গত ৮ জুলাই ফের সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোকে একই নির্দেশনা দেন এই কর্মকর্তা। তাতেও টনক নড়েনি।

অপরদিকে গত ২ আগস্ট আনন্দনিকেতন স্কুল, সিলেট গ্রামার স্কুল, রাইজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ‘সিলেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অভিভাবক অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনের পক্ষে সভাপতি মাহবুব চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিত অপি এই আইনি নোটিশ পাঠান। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে গৃহীত ফি ফেরত, বাকিদের কাছ থেকে ফি না নেওয়ার ঘোষণা নোটিশ বোর্ডে টানানো ও ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে এ নোটিশ দেওয়া হয়। সবশেষ গত মঙ্গলবার বিষয়টি জানিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেবজিৎ সিংয়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘সিলেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অভিভাবক অ্যাসোসিয়েশন’। এর আগে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিভিন্ন নামে ফি নেওয়ার বিষয়টি সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ারকে জানায় ‘সিলেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অভিভাবক অ্যাসোসিয়েশন’। ওই সময় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কিছুদিন বন্ধ রাখার পর ফের বিভিন্ন নামে ফি আদায় করতে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

এ বিষয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর হাইকোর্টের রায়ের পর অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে তাদের মতানুসারে বিভিন্ন খাতে ফি নির্ধারণ করা হয়। আমরা ষান্মাসিক বা বার্ষিক কোনো ফি নিচ্ছি না।’ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রিন্সিপাল স্যার (বর্তমানে দেশের বাইরে) বলতে পারবেন।’

সামগ্রিক বিষয়ে সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলজার আহমদ খান বলেন, ‘আমরা এর আগে তিনবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন নামে ফি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সিলেটের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর প্রধান এবং অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা)।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads