• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মাদরাসা উন্নয়নে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা

লোগো বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

মাদরাসা উন্নয়নে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা

#একনেকে ১৮ প্রকল্পের অনুমোদন # ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্ষমতার শেষপ্রান্তে এসে মাদরাসা অবকাঠামো উন্নয়নে ৫ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত ১ হাজার ৬৮১ আলিয়া মাদরাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ৬ লাখ ১২ হাজার আসবাবপত্র সংগ্রহ, ৬ হাজার ৭১৪ জনের প্রশিক্ষণ ও সোলার প্যানেল স্থাপন ও সেমিনার কক্ষ নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক টয়লেট নির্মাণের কাজ করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, গতকাল একনেকে মোট ১৮ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ১৩ হাজার ৮১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বহন করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৪২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৯৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসার উন্নতি না হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা এ বিষয়ে বেসরকারি চাহিদাপত্র (ডিও) দিয়েছেন। তাদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় প্রতিজন সংসদ সদস্য ছয়টি মাদরাসা নির্বাচন করতে পারবেন। প্রতি এমপির জন্য বরাদ্দ থাকবে ২০ কোটি টাকা। এর বাইরে ফলাফল ও সার্বিক দক্ষতা দেখে আরো ২০০ মাদরাসার উন্নয়নে কাজ করা হবে। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহূত বধ্যভূমি সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে নেওয়া প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মন্ত্রী জানান, ২৬ জেলার ২২৪ উপজেলার গ্রামীণ সড়ক, হাটবাজারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে চলমান রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর বাড়িয়ে সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০১০ সালে ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে মূল প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ হিসাবে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ডেলিভারি শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ায় আর্থিক ও ভৌত অভিগম্যতার উন্নয়ন, নগরবাসীর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য সম্পর্কিত অপরিহার্য সেবা প্যাকেজের মাধ্যমে বিশেষ করে দরিদ্রদের সেবা নিশ্চিত করা হবে।

এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। ফলে পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। তাই আগামীতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। তিনি আরো বলেন, দেশের সব মানুষকে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা হবে। দেশের প্রত্যেকটা নদী পর্যায়ক্রমে শাসন করা হবে।

১৪ লাখ নতুন গ্রাহক সৃষ্টির লক্ষ্যে চলমান বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ২০১৪ সালে নেওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ছে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। ১ হাজার ৬৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় উঠছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। এ প্রকল্পেও গচ্ছা যাচ্ছে ৩১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সন্দ্বীপের সব জনগণ বিদ্যুৎ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০১৫ সালের ২২ জুন বাতিল করা পটুয়াখালী জেলার লোহাদিয়া সেতুর ওপর পিসি গার্ডার সেতুর কাজ আবার শুরু হচ্ছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে ১০২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া ফরিদপুর জেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর রক্ষায় একটি পৃথক প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে নদীভাঙন ও বন্যা থেকে এলাকার মানুষ রক্ষা পাবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। এছাড়া বিদ্যালয়, হাটবাজার, রাস্তা, ব্রিজ, ফসলি জমি. বাড়িঘর, ধর্মীয় উপাসনালয়, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রক্ষায় প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে বলে প্রস্তাবে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

অনুমোদন পাওয়া নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের ফলে কৃষিকাজে মহিলাদের সক্ষমতা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করছে পরিকল্পনা কমিশন।

জামালপুর-ধনুয়া-কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৭৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সাভারস্থ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গবেষণা রিঅ্যাক্টর ফ্যাসিলিটির সেফটি সিস্টেমের সমন্বয় সাধন, আধুনিকীকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বর্ধিতকরণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে গতকাল।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে জামালপুর জেলার ৮ পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথ পুনর্বাসন ও নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ১৩টি নদীবন্দরের প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে বরিশাল বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯২০ কোটি টাকা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads