• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সখীপুরে জেএসসি-জেডিসির ৭৭ পরীক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার!

বাল্যবিয়ের শিকার জেএসসি-জেডিসির ৭৭ শিক্ষার্থী

প্রতীকী ছবি

শিক্ষা

সখীপুরে জেএসসি-জেডিসির ৭৭ পরীক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার

  • সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ নভেম্বর ২০১৮

গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া চলতি জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় সখীপুর উপজেলার ৭টি কেন্দ্রে ৭৭ জন ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে। এদের মধ্যে ৬১ ছাত্রী জেএসসি ও ১৬ ছাত্রী জেডিসি পরীক্ষার্থী ছিল। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবদের কাছ থেকে অনুপস্থিতির এ তালিকা পাওয়া গেছে। অনুপস্থিত ছাত্রীরা প্রবেশপত্রও সংগ্রহ করেনি। বাল্যবিয়ে হওয়ার কারণেই অধিকাংশ ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এছাড়াও ৬২ জন ছাত্রও অনুপস্থিত রয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে ৪ হাজার ২৬৯ জন পরীক্ষার্থী ৫টি কেন্দ্রে এবং ২৭টি দাখিল মাদ্রাসার ৯৪৮ জন পরীক্ষার্থী ২টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল। এর মধ্যে জেএসসিতে ৬১ ও জেডিসিতে ১৬ ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে সখীপুর পিএম পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক কেন্দ্র সচিব মো. এমদাদুল হক মিয়া জেএসসি পরীক্ষায় ৬১ ছাত্রী অনুপস্থিতির কথা এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও ভেন্যু কেন্দ্র সচিবদের বরাত দিয়ে তিনি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছাত্রীদের বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানান।

এ ব্যাপারে সখীপুরের কালিদাস দাখিল মাদ্রাসার সুপার কেন্দ্র সচিব মাওলানা হাবিবুর রহমান জেডিসিতে ১৬ ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা সুপারদের বরাত দিয়ে বাল্যবিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের অগোচরে অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেলে তা রোধ করার কোনো সুযোগ থাকে না। তারপরও বাল্যবিয়ে রোধকল্পে আরও নজরদারি বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া ৬২ জন ছাত্র অনুপস্থিতির ব্যাপারে বিদ্যালয় প্রধানরা জানান, এ বিষয়ে দারিদ্রতা ও অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। ঝরে পড়া অনেক ছাত্র শিশুশ্রমের শিকার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে শিক্ষাজীবন থেকে এভাবে ঝরে পড়া খুবই হতাশার বিষয়। নারী শিক্ষা প্রসারে বাল্যবিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে দারিদ্রতা ও অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তিনি আরও জানান, বাল্যবিয়ে রোধ করা না গেলে সামাজিক ক্ষত শুধু বেড়েই যাবে। এর ফলে জাতি মেধা বঞ্চিত হবে। আর মাতৃমৃত্যু বা কন্যাশিশুর জীবনহানি ঘটবে। অভিভাকদের খামখেয়ালিপনা, অজ্ঞতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট, সতীত্ব সম্পর্কে অস্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মীয় মনোভাব, ভূয়া জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে, কাজির দুর্নীতিসহ নানা কারণে সমাজের পিছিয়ে পড়া নাগরিক, সমাজে বাল্যবিয়ে চলছে সবার অলক্ষ্যে বলেও যোগ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বেলায়েত হোসেন বলেন, দারিদ্র্যতা আর অভিভাবকদের অদূরদর্শিতায় বাল্যবিয়ে দিনদিন বাড়ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র বাল্যবিয়ের কারণে। অথচ বাল্যবিয়ে রোধে দেশে আইন আছে, সরকারের প্রচেষ্টারও অন্ত নেই। তবুও এর বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণিতে বাল্যবিয়ের মতো ঘটনা কম-বেশি ঘটছে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও পারিবারিক নির্যাতনকে উসকে দেয় বাল্যবিয়ে। বিশেষ করে শারীরিক অপরিপক্কতার কারণে শিশুকন্যাটি বিয়ের পরে স্বাস্থ্যগত নানা জটিল সমস্যার শিকার হয়। মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় সবাই। ফলে জীবন বিকাশে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তবে এ বিষয়ে সকলের সচেতনতাই পারে বাল্যবিয়ে রোধ করতে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী সরকার রাখী বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে এত বেশিসংখ্যক ছাত্রী পরীক্ষার্থী অনুপস্থিতির বিষয়টি উদ্বেগজনক। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে আইনি পদক্ষেপসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads