• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
টঙ্গীতে ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা

টঙ্গীতে ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

এ নিয়ে ৯ মাসে ঢাবির আট শিক্ষার্থীর আত্মহনন

  • ঢাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০১৮

রাজধানীর অদূরে টঙ্গীতে গত বৃহস্পতিবার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হুজাইফা রশিদ। পরিবারের ধারণা, একাডেমিক হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ নিয়ে গত ১০ দিনে ঢাবির ৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যা নিয়ে চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর) ঢাবির আট শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। আত্মহত্যাকারী ৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে চাকরি না পাওয়ার হতাশা, একাডেমিক চাপ, পারিবারিক অভাব ও প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রয়েছে। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হঠাৎ আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যু স্বস্তিদায়ক নয়। শিক্ষক হিসেবে এটি আমাদের জন্য অনেক বেশি পীড়াদায়ক। এটা তো (আত্মহত্যা) কোনো সমাধান নয়-এ বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের বুঝতে হবে। শিক্ষার্থীর পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবার আন্তরিক প্রচেষ্টাই পারে এ থেকে মুক্তি দিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের পরিচালক এবং অ্যাডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক বলেন, আমরা সবাই সচেতন হলে ঘটনাগুলো কমানো সম্ভব। কারো যদি আত্মহত্যা করার মতো অবস্থা হয়, তাহলে তার বন্ধুদের উচিত গায়ে হাত রাখা এবং তাকে বোঝানো যে পৃথিবীতে তোমার বেঁচে থাকা কতটা দরকার।

মেহজাবিন হক আরো বলেন, আত্মহত্যাই একমাত্র সমাধান নয়। বরং সেটি নিজেকে একেবারেই শেষ করে ফেলে। তাই বিষণ্নতা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে এবং তাদের সেদিকে পরিচালিত করতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকদের এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ নভেম্বর যশোরে গ্রামের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন ঢাবির ২০১০-১১ সেশনের প্রাক্তন ছাত্রী মেহের নিগার দানি। বন্ধুদের ভাষ্যমতে, দানি একা একা ও বিষণ্নতার মধ্যে থাকতেন।

প্রেমঘটিত কারণে চলতি মাসের ১২ তারিখে রাজধানীর ফার্মগেটে একটি হোস্টেলে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাহমিদা রেজা সিলভি।

এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগের নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে নিচে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ফিন্যান্স বিভাগের তরুণ হোসেন। তার বন্ধুরা জানান, বিভাগের পড়ার চাপ ও সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য সবার নিগ্রহ তাকে হতাশাগ্রস্ত করেছিল।

গত ৩১ মার্চ বিজনেস ফ্যাকাল্টির এমবিএ ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে তার সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা জানান।

১৫ আগস্ট রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আত্মহত্যা করেন সঙ্গীত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিক মাহবুব। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি দেশের শিক্ষা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসটি ছিল- ‘আই ওয়ান্ট ফ্রিডম অ্যাজ এ বাংলাদেশি ইভেন ইফ ইট কিলস মি ফর দ্য রিজন।’

এ ছাড়া ১০ সেপ্টেম্বরে রাজধানীর রামপুরায় নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নেন মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আফিয়া সারিকা। তার পরিবারের ধারণা, প্রেমসংক্রান্ত কোনো কারণে সারিকা আত্মহত্যা করতে পারেন।

গত ১৫ অক্টোবর গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র জাকির হোসেন। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন বলে ধারণা তার বন্ধুদের।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads