• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সিলেটে নতুন বছরে গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

সিলেটে নতুন বছরে গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য

  • আবু তাহের চৌধুরী, সিলেট
  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০১৯

সিলেট বই উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতে লাইব্রেরি গুলোতে শুরু হয়েছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, পুস্তক বিক্রেতা ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নিষিদ্ধ গাইড বাণিজ্যের এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ফলে বাধ্য হয়েএসব গাইড বই কিনতে হচ্ছে তাদের।

অভিভাবকদের অভিযোগ, কিছু অসাধু শিক্ষক, প্রকাশনী, বিক্রেতা এসব অবৈধ গাইড বই বাজারজাতের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিল করছেন।

যদিও দেশে ১৯৮০ সালের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইন বিদ্যমান। আর এই আইন অনুসারে গাইড ও নোটবই ছাপা এবং বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া ২০০৮ সালে নির্বাহী আদেশে নোটবই ও গাইডবই নিষিদ্ধ করা হয়।

সরেজমিনে সিলেট নগরের সবচেয়ে বড় পুস্তক বিক্রয় মার্কেট রাজা ম্যানশনে গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরি গুলোতে প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা। কোনো কোনো লাইব্রেরি আবার ‘একের ভিতরে সব’ বলে প্যাকেজ করে গাইড বিক্রি করছে। বিক্রেতারা এসব গাইড বই টেস্ট পেপার, সহায়ক বই, মেইড ইজি বিভিন্ন নামে বাজারে বিক্রি করছেন।

লাইব্রেরিগুলো ঘুরে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন নামে বিভিন্ন কোম্পানির গাইড বই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সাজেশন নামেও গাইড বই বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হওয়া গাইড বইয়ের অন্যতম প্রকাশনী সংস্থা হলো লেকচার, অনুপম, পাঞ্জেরী, নবদূত, পপি ও জুপিটার। ৯ম ও ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বাজারে প্রাপ্ত গাইড বইয়ের প্রকাশনী হলো রয়েল, কম্পিউটার, পাঞ্জেরী, লেকচার, অনুপম, জুপিটার।  একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য গাইড বইয়ের প্রকাশনী হিসেবে বাজারে লেকচার, পাঞ্জেরী, জুপিটার, পপি, বই পাওয়া যাচ্ছে। এসব গাইড বই কিনতে খরচ হচ্ছে ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, নির্দিষ্ট প্রকাশনার প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড কিনতে উৎসাহিত করছেন। ক্লাসে বুকলিস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নোট, গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তারা। এজন্য তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থও প্রদান করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি সিলেট জেলা শাখার এক নেতা জানান, প্রসাশনের সহায়তা নিয়েই গাইড বই প্রকাশ্যে বিক্রি হয়। এজন্য প্রসাশন ও রাজনৈতিক নেতাদের বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী যা বলেন তা করেন না। আর যা বলেন না তাই করেন। তিনি চাইলে গাইড বানিজ্য বন্ধ করতে পারতেন।

তার অভিযোগ, শিক্ষকেরা কমিশন নিয়ে গাইড কিনতে ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। গাইড বই নিষিদ্ধের আইনের প্রয়োগ নেই। আইনের প্রয়োগ থাকলে নিষিদ্ধ বই এভাবে বিক্রি হতে পারতো না।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। গাইড বই শিক্ষাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। গাইড বই বন্ধের জন্য আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছি। কোনো প্রতিষ্ঠান যেন গাইড বই উৎসাহিত না করে এজন্য আমাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তিনি বলেন, কোনো শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি গাইড বই কিনতে উৎসাহিত করার সুনিদিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব লাইব্রেরি গুলোতে নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রি হয় সেখানে অভিযান চালানো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads