• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ঢাকার ৪০ প্রতিষ্ঠান নিয়েছে সাড়ে ২৩ কোটি টাকা

লোগো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি)

শিক্ষা

এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়

ঢাকার ৪০ প্রতিষ্ঠান নিয়েছে সাড়ে ২৩ কোটি টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজধানীর ৪০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ১১টি তদারকি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন জানা যায়, ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেছে, যার মোট পরিমাণ ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৮৮০ টাকা। নিয়মবহির্ভূত আদায়কৃত অর্থ শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে দায়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জানানো হলেও, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। মাউশির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো কোনোটি ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্তও আদায় করেছে। মোট অর্থ আদায়ের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কে এল জুবিলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ছোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়, আহমেদ বাওয়ানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল ও এসওএস হারমান মেইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকালে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে জানালেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গভার্নিং বডি  রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের বিষয়টি জানিয়েছে।

২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ উঠলে গত ২০ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তদন্তের জন্য ১১টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য একটি করে কমিটি গঠন করে। প্রতিটি কমিটিতে তিন জন করে সদস্য রাখা হয়।

এসব কমিটি রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করে অভিযুক্ত ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে খুঁজে বের করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টি প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও। বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় কমিটিকে কোনো তথ্য দেয়নি বলে জানা যায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেএল জুবিলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৪৭৩ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার ২৫০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করেছে ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৫০ টাকা। আহমেদ বাওয়ানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৪৮২ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০ করে অতিরিক্ত আদায় করেছে ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা। আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ২৬৬ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৪ হাজার ৭০০ করে অতিরিক্ত আদায় করেছে ১২ লাখ ৫০ হাজার ২০০ টাকা। সেন্ট ফ্রান্সিস জেবিয়ার্স গার্লস হাইস্কুল ২৪৬ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৮ হাজার করে অতিরিক্ত আদায় করেছে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৮ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৮ হাজার ৪০০ করে অতিরিক্ত আদায় করেছে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ টাকা। ছালমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৫৬ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৪ হাজার ২০০ করে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ১৯ লাখ ১৫ হাজার ২০০ টাকা। ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলের ২২৩ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার করে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা ১১টি টিমের প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাসংক্রান্ত সব বিষয়ের দায়িত্ব পালন করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড। মন্ত্রণালয় কৌশল, নীতি ও সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। সেই হিসেবে রাজধানীর অভিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দিয়েছে, যারা ফেরত দেয়নি বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থা তদারকি টিম করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে তদন্ত করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads