• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
শ্রেণি কক্ষে যেতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সীমাহীন কষ্ট

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কেছকিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে যেতে প্রতিদিনই শিশুদের এভাবেই উঠতে হয়

ছবি : বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

কেছকিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

শ্রেণি কক্ষে যেতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সীমাহীন কষ্ট

  • মো. এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০১৯

‘বাইরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট’-এমনই অবস্থা কেছকিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। গত তিন বছর আগে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী কেছকিমুড়া গ্রামে এটি স্থাপিত হয়। নতুন ভবন দিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেও এখন বাইরে থেকে বিদ্যালয়ের অবস্থা নতুনই দেখা যায়। কিন্তু ভিতরের অবস্থা খুবই নাজুক। মাঠ নিচু হওয়ায় শ্রেণি কক্ষে যেতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়। পড়ে আহত হয়েছে অনেক শিশু। বিদ্যালয়ের নানা রকম সমস্যার যেন সমাধান করার কেউ নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে নতুন ভবনের মাধ্যমে কেছকিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। নিম্নমানের কাজের কারণে নির্মাণের দুই বছরের মধ্যেই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের মেঝে খসখসে হয়ে আস্তর উঠে গেছে। বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে শ্রেণিকক্ষ অনেক উপরে থাকায় কোমলমতি শিশুদের উঠতে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়। সিঁড়ি ও পাশ দিয়ে উঠার সময় হোঁচট লেগে নিচে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার নিচে পড়ে মাথা ফেটেছে প্রথম শ্রেণির ছাত্র জোবায়েদ হোসেন সাজিদের। সে বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী বাহরাইন প্রবাসী অলি উল্যাহর ছেলে।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ২০১৬ সালে শতভাগ, ২০১৭ সালে ৯৭ ভাগ ও ২০১৮ সালে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। এরমধ্যে শিশু শ্রেণিতে ২৮ জন এবং প্রথম শ্রেণিতে ২৫ জন। ভর্তির বাইরেও অভিভাবকরা ৩-৪ বছরের শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠায়। সীমান্তবর্তী কেছকিমুড়া ও আদর্শগ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। কোমলমতি শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে প্রবেশের দুইটি রাস্তা আছে। এরমধ্যে একটি উত্তর-পশ্চিম পাশের সরু রাস্তা ও দক্ষিণ পাশের রাস্তাটিতে রয়েছে দুইটি কালভার্ট। এরমধ্যে একটি পাকা, অন্যটি বাঁশের তৈরি। পাকা কালভার্টের দুই পাশে সরু রাস্তা ও মাটি কম, বাঁশের তৈরি কালভার্টের একাংশ ভাঙা। অনেক সময় ওই কালভার্টে পড়ে কোমলমতি শিশুরা আহত হয়। বিদ্যালয়ের চারপাশে কোন দেয়াল নেই। শুধু এতিমের মতো দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যালয় ভবনটি। ভিতরে থাকা কয়েকটি টেবিল ও বেঞ্চ ভেঙে গেছে। শ্রেণি কক্ষের মেঝের অধিকাংশই খসখসে হয়ে উঠে গেছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে দুইটি টিউবওয়েল রয়েছে। এরমধ্যে একটি অকেজো ও অপরটি আর্সেনিকযুক্ত। তাই বিদ্যালয়ের কোমলমিত শিশুরা পাশ্ববর্তী বাড়ির টিউবওয়েল ব্যবহার করে।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মাহবুবুল হকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিদ্যালয় শুরুর কিছুক্ষণ পরই আহত এক ছাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিলে বিদ্যালয়ের জন্য তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিলেও যাতায়াত সমস্যার কারণে দুইজন সেখানে যায়নি। তারা অন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। গত বছর নিয়োগপ্রাপ্ত একজনও তার পছন্দের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও আছে মাত্র ৩ জন। এই ৩ জনের মধ্যে ১ জন আছেন ডেপুটেশনে। নেই দফতরি কাম প্রহরীও।

সচেতন মহল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু কেছকিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচু মাঠকে উঁচু করা এবং ভবনটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিদ্যালয়ের সকল সমস্যার সমাধান করার জন্য সাংসদ মুজিবুল হক ও শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন কয়েকটি সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘শিগগিরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সাথে সমন্বয় করে মাঠ উঁচু করা হবে। এতে কোমলমতি শিশুদের ভোগান্তি কমে যাবে’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads