• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পরীক্ষা থাকছে না তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত

পরীক্ষা থাকছে না তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত

ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষা

পরীক্ষা থাকছে না তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০১৯

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে সব ধরনের পরীক্ষা আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি, স্কুল থেকে দেওয়া ডায়েরির রিপোর্টই মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। পরীক্ষার চাপ যেন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হতে না পারে, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিশুদের ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে সব ধরনের পরীক্ষা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ নির্দেশ কার্যকর করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই তিন শ্রেণিতে পরীক্ষা তুলে নেওয়া হলে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতির হার এবং স্কুল থেকে তাদের যে ডায়রি দেওয়া হয় তার রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন করা হতে পারে।

আকরাম-আল-হোসেন আরো জানান, ঢাকার পিটিআইয়ে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় এ-সংক্রান্ত কর্মশালায় বক্তাদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুদের ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে সব ধরনের পরীক্ষা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে থেকেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়নের মাধ্যমেই উত্তীর্ণ করা হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকছে না। তিনি আরো জানান, অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

গত ১৩ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি এটুকুই বলব, কোনোমতেই যেন কোমলমতি শিশুকে কোনো অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া হয়। তা হলেই দেখবেন তারা ভেতরে একটা আলাদা শক্তি পাবে। তাদের শিক্ষার ভিতটা শক্তভাবে তৈরি হবে। কোমলমতি বয়সে লেখাপড়ার কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করাকে ‘এক ধরনের মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা প্রথমে স্কুলে যাবে এবং হাসি-খেলার মধ্য দিয়ে লেখাপড়া করবে।

তিনি বলেন, তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেই তো সে স্কুলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শিশুর পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে আরো বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই ৭ বছরের আগে শিশুকে স্কুলে পাঠায় না।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন হাসতে, খেলতে, মজা করতে করতে পড়াশোনাটাকে নিজের মতো করে করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণশিক্ষা সচিবকে আগামী বছর থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব পরীক্ষা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করারও চিন্তাভাবনা চলছে। সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয় না। শিশুর ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে ফিনল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আদলে শিক্ষাব্যবস্থা সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর করার চিন্তা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্কুলকে আকর্ষণীয় করতে প্রতিটি স্কুলে ‘কাব স্কাউট’ গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads