• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
থাকার কথা শ্রেণিকক্ষে পেটের দায়ে রাজপথে

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেতনের সরকারি অংশের (এমপিও) দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষা

থাকার কথা শ্রেণিকক্ষে পেটের দায়ে রাজপথে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০১৯

আমরা তো শিক্ষক। আমাদের থাকার কথা শ্রেণিকক্ষে। কিন্তু নিজেদের পেটের দায়ে পরিবারের জন্য এখন রাজপথে নেমে এসেছি। অনেক নন-এমপিও শিক্ষকের অবসরে যাওয়ার সময়ে হয়ে গেছে। সারা জীবন শিক্ষকতা করে অবসরে গেলেন খালি হাতে। তাহলে তাদের পরিবারের কী হবে?

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেতনের সরকারি অংশের (এমপিও) দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি অংশ নেওয়া শিক্ষক মাহমুদ আলী আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, গত বছরও আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল এমপিওভুক্ত করার। কিন্তু অজানা কারণে এখনো সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এবার আমরা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরে যাব। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, আমাদের দাবি মেনে নিন। আমাদের সন্তানদের কথা বিবেচনা করে আমাদের দাবিটা বাস্তবায়ন করুন।

বরিশাল থেকে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা সাইফুদ্দিন মাহতাব বলেন, আমরা শিক্ষকরা কেন রাজপথে থাকব? কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, পরিবারের কথা চিন্তা করেই আন্দোলনে নেমেছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ করব আমাদের দাবি মেনে নিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান এমপিও দাবিতে আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে সরকার তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য যে আশ্বাস দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন চান তারা।

এমপিওর দাবিতে তিন দিন ধরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল শুক্রবার প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত শিক্ষক-কর্মচারী সেখানে রোদ উপেক্ষা করে অবস্থান করছেন।  এবার দাবি বাস্তবায়ন করেই ঘরে ফিরবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। কদম ফোয়ারার সামনে ব্যারিকেড দিয়ে দাবিসংবলিত নানা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে ‘সেভ আওয়ার চিলড্রেন’, ‘উই ওয়ান্ট এমপিও’, ‘আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে’, ‘নন-এমপিও সংগ্রাম চলছে, চলবে’।

শিক্ষকরা জানান, গত ২০ মার্চ থেকে সারা দেশের পাঁচ হাজারের বেশি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এখানে অবস্থান করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাননি তারা। দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

শিক্ষকরা বলছেন, গত বছর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন চলাকালে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল দাবি মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী অর্থবছরে হবে। তাই তারা বাধ্য হয়ে আবারো আন্দোলনে নেমেছেন।

এই শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন-অনশন-অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব তাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তখন তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। অনশন ভেঙে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে বলেছেন।

২০১৮ সালের ১১ জুলাই তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। ওই দিন বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনশনরত অবস্থায় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, রাশেদা কে চৌধুরী, তারেক জিয়া উদ্দিন এসে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাদের দাবি অবশ্যই পূরণ করবেন। আপনারা অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে যান।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, এসব আশ্বাসেই আমরা সেই সময় বাড়ি ফিরে যাই। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করে। কিন্তু অজানা কারণে এখনো এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।

আমাদের একটাই দাবি, সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে একযোগে এমপিওভুক্ত করতে হবে। যদি এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যা হয় তাহলে তিন ধাপে করতে পারে সরকার। তবু যেন আমাদের এমপিওভুক্ত করে।

সভাপতি আরো বলেন, এর আগে সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিল, চলতি অর্থবছর (২০১৮-১৯) থেকে এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু হবে। কিন্তু অনেক সময় অতিবাহিত হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা হতাশার জায়গা থেকে আবারো এখানে এসেছি। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ। যেহেতু ওনার প্রতিশ্রুতি আছে, আমরা আশা করি, এর বাস্তবায়ন হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads