• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

  • গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৯

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

এ দিকে এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষককে বেশ কিছু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেবার কথা জানালেও এ ব্যাপারে সবার সামনে মুখ খুলতে রাজী হননি। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেছেন তাকে শিক্ষক রাজনীতির শিকার হতে হয়েছে।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. আক্কাস আলী গত ডিসেম্বর মাসে ওই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্রীকে থিসিসের নামে প্রায় সময় নিজ বাড়ীতে ডেকে নিতেন। এসময় তিনি বিভিন্নভাবে কু-প্রস্তাব দেয়াসহ যৌন হয়রানী করে আসছিলেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয়।

এদিকে দুই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানীর দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আক্কাস আলীর শাস্তির দাবীতে রোববার সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দেয়ার দাবী জানান। শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

যৌন নিপীড়নের শিকার দুই শিক্ষার্থী জানান, ওই শিক্ষক কৌশলে দুই শিক্ষার্থীসহ তিন শিক্ষার্থীর থিসিসের দায়িত্ব নেন। তার তত্ত্বাবধানে আমরা তিন ছাত্রী মিলে একটি গ্রুপ গঠন করে কাজ শুরু করি। সে অনুযায়ী সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আক্কাস আলী আমাদের সুপারভাইজার হন। এরপর বিভিন্ন সময় ওই শিক্ষক তাদের বাসায় ও ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকতেন এবং শরীর স্পর্শ করতেন। মোবাইল ফোনে ডেকে এনে তাদেরকে কু-প্রস্তাব দিতেন। পরীক্ষার ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি এ সুযোগ নিতেন। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।

তারা আরো জানান, সম্প্রতি তাদের অভিযোগপত্র কে বা কারা ফেসবুকে পোস্ট করে দেয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য লেখে এ ঘটনার নিন্দা জানান।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, ওই শিক্ষক আক্কাস আলী তাকে থিসিসে কাজ আছে বলে একা বিভাগে ডেকে নিয়ে যান। পরে সেখানে তিনি তার সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ শুরু করেন। এতে বাধা দিলে ওই শিক্ষক তাকে ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। আর রাজি হলে থিসিসে নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় তিনি কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পরে তিনি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। শিক্ষকদের পরামর্শে তিনি বিভাগীয় প্রধানের যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক নারী ঘটিত ঘটনা ঘটার পর সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলছে। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও তারা জানান।

এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ জেলা সুজনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী ও সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হাবিবুর রহমান বলেন, বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘটনার পরও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন ঘটনা ঘটেই চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ বলেও মনে করেন সুশীল সমাজের নেতারা।

অভিযুক্ত সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. আক্কাস আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একই বিভাগের অন্য শিক্ষকের সঙ্গে বিভাগীয় প্রধান হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা থাকায় তারই বহিঃপ্রকাশ হিসাবে শিক্ষার্থী দিয়ে তাকে ফাঁসানো হযেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্স-এর শিকার হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. আব্দুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসার ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads