• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
কেন্দ্রে শীর্ষ পদ চায় জবি ছাত্রলীগ-ছাত্রদল

ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের লোগো

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

কেন্দ্রে শীর্ষ পদ চায় জবি ছাত্রলীগ-ছাত্রদল

  • মহিউদ্দিন রিফাত, জবি
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০১৯

আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদের একটি চায় সংগঠন দুটির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা এমনটাই মত ব্যক্ত করেন। তারা মনে করেন, আন্দোলন-সংগ্রামে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল। দুই ছাত্র সংগঠনেরই কেন্দ্রীয় শীর্ষপদে নেতা নির্বাচন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

আন্দোলন-সংগ্রামের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ দুই পদের একটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া নেতাকর্মীদের সময়ের দাবি। গত বছর ১১ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন মাঠে নেমে শক্ত অবস্থানের জানান দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা। কিন্তু তখন মূল্যায়ন করা হয়নি তাদের। কেন্দ্রীয় শীর্ষপদের কোথাও রাখা হয়নি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নেতাকর্মীকে। সেখানে শেখ রেজওয়ানুল হক শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

এর মাঝেই গত ১৫ এপ্রিল সোমবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন নয় মাসেও ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত কমিটি করার তাগিদ দেন তারা। এরপরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে তোড়জোড়ের আভাস

দেখা যায়। নতুন কমিটি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের কাছে ধরনা দেওয়া শুরু করেন।  

সর্বশেষ ২০০২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নজরুল ইসলাম বাবু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হন। এরপর কামরুল হাসান রিপন ছাত্রলীগের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কথিত সিন্ডিকেটের ভোটযুদ্ধে হেরে যান। নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কারণে তারপর আর কেউ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রার্থী পর্যন্ত হতে পারেননি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দাবি বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অবদান কম নয়। ১/১১-এর সময় অন্যান্য স্থানে কর্মী সঙ্কটের কারণে হাজিরা খাতায় নাম লিখে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিতেন জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপস্থিতির তালিকায় নাকি চোখে পড়ার মতো ছিল জবি ছাত্রলীগ। হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র ঘটনায় জবি ছাত্রলীগ ছাড়া আর কাউকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অন্যান্য ইউনিটের নেতাকর্মীদের সংখ্যা যখন প্রায় শূন্যের কোঠায় তখন জগন্নাথ ছাত্রলীগ পুরান ঢাকায় ভ্যানগার্ডের দায়িত্ব পালন করেছে। 

বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়ার আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়া নেতারা বলেছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান দেখে নয়, এবারের কাউন্সিলে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন করবেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নেতা নির্বাচন করা হয়।

অপরদিকে দল গোছানোর অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দেন খালেদা জিয়া। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দুবছর আগে। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বিশেষ ভূমিকা না রাখতে পারায় ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নতুন কমিটিতে ত্যাগী ও বিগত দিনে আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখা নেতারা অগ্রাধিকার পাবেন বলে জানা যায়। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়া ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বিএনপি নেতাদের নিয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। সার্চ কমিটি শীর্ষপদ নির্ধারণে যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছে। সংক্ষিপ্ত ওই তালিকায় এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে বলে শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে লবিং-তদবির নয় বরং দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় এবং দলের জন্য ত্যাগ আছে এমন ছাত্র নেতাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ছাত্রদলের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী জানান, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রদলকে বিতাড়িত করা হয়। সেক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শক্ত অবস্থান ধরে রাখে। এরপরও দলীয় কোনো কর্মসূচিতে জবি ছাত্রদল ক্যাম্পাসের ভেতরে মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুছে দিলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তীব্র আন্দোলনে তা আবার পুনঃস্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

২০১৩ সালের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে জবি ছাত্রদল। এসময় পুলিশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জবি ছাত্রদলের সাবেক নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের কোমরে গুলি করে। আহত ছাত্রদল নেতা দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলামিন, মাযহারুল ইসলাম রাসেল, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান রানা ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সুমন ও তানভীরের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু ফিরে আসার পথে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের কাছ থেকে র্যাব-১-এর সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে যান। এখন পর্যন্ত তাদের হদিস পাওয়া যায়নি।

২০১৫ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের সামনে অবরোধ চলাকালীন পুলিশে গুলিতে মারাত্মক আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা নয়ন বাছার। এখন নয়ন বাছার ভারতে ভেল্লরের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমানে দাবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সবসময় আন্দোলন সংগ্রামের মাঠে অগ্রগামী ছিল এবং আছে। এখন পর্যন্ত পুরান ঢাকাসহ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয়। যা অন্যান্য ক্যাম্পাসে নজিরবিহীন। তাই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ‘সুপার টু’-এর একটি জবি ছাত্রদল থেকে নেওয়া সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads