• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
অভিভাবকের কাছে যাবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির বার্তা

খুলনার দাকোট উপজেলার চালনা কেসি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। আঙ্গলের ছাপ দিয়ে শ্রেণিক্ষে ঢুকছে তারা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

অভিভাবকের কাছে যাবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির বার্তা

  • দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ জুলাই ২০১৯

খুলনার দাকোপ উপজেলার সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলে যাচ্ছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি গণনাপদ্ধতি। খাতা-কলমের পরিবর্তে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে আঙুলের ছাপে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি গ্রহণ করা হবে। ডিজিটাল এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের প্রবেশ ও বের হওয়ার মুহূর্তে খুদে বার্তা চলে যাবে অভিভাবকদের কাছে। এর ফলে অভিভাবকদের শঙ্কা কমবে। পাশাপাশি জানা যাবে শিক্ষার্থীদের দৈনিক ও সারা বছরের গড় উপস্থিতি।

চালনা পৌরসভার সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। জুন মাসে বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্রিক যন্ত্রও স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ডেটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। এটি শেষ হলেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থিতি গণনা শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

চালনা কেসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আঞ্জুমানারা বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার মানোন্নয়নে শিশুদের ঝরে পড়ারোধ ও উপস্থিতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই যন্ত্র খুবই ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, তাঁর স্কুলের মোট ২‘শ ২৩ জন শিক্ষার্থীর ডেটাবেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বায়োমেট্রিক যন্ত্রের ডিজিটাল কার্ডের সাহায্যে উপস্থিতি গণনা শুরু হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রমতে, বায়োমেট্রিক ডিভাইস স্থাপনে সরকারের সীলিপ তহবিল থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। অনুপস্থিত প্রতি শিক্ষার্থীর অভিভাবককে দৈনিক দুটি করে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। মাসিক গড়ে ২০দিন শ্রেণির কার্যক্রম হলে তাতে খুদে বার্তাসহ খরচ পড়বে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এই টাকা বহন করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। উন্নত এই প্রযুক্তির কার্ড ব্যবহারের জন্য দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কোনো খরচ দিতে হবে না। বিষয়টি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বৈঠকের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিক্ষার ফলাফল, অভিভাবক সমাবেশ ও সকল ধরণের তথ্য সঠিক সময়ে সরবারহ করা হবে। শিক্ষকদের জন্যেও এ যন্ত্রের কার্যক্রম একই।

সরেজমিনে চালনা কেসি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের সাইক্লোন শেল্টারের দু’তলা ভবনের সীড়ির পাশে বায়োমেট্রিক ওই যন্ত্র স্থাপন করা। শিক্ষার্থীরা ভবনের দোতলার শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ ও ত্যাগ করার আগে আঙুরের ছাপ দিয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করে যায়।

ডিজিটাল এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় ভীষণ খুশি চালনা কেসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান। তিনি জানান, সঠিক সময়ে স্কুলে উপস্থিত হতে না পারলে সেদিনের হাজিরা আর দেয়া সম্ভব হবে না।

হাতের আঙুল ব্যবহার করে উপস্থিতি নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষকদের কাছে শুনেছে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আকাশ ম-ল। তিনি জানায়, ওই পদ্ধতি চালুর প্রথম দিনের স্কুলে এসে আগেই ডিজিটাল এই কার্ড মেশিনে ধরে তিনি। তারপর শ্রেণিকক্ষে গিয়ে বসে। আবার স্কুল ছুটির সময় ওই মেশিনে কার্ডের ছোয়া দিয়ে বাড়িতে যায়।

প্রযুক্তির এই পদ্ধতির সম্পর্কে অভিভাবক আফসানা মিমি বলেন, ডিজিটাল এই যন্ত্র দুশ্চিন্তা কমাতে বেশ সহযোগিতা করছে। আগে স্কুলে তার বাচ্চাটি গিয়েছে কি না? সেটির সঠিক খবর পেত না। পড়াশোনার সঠিক তথ্য পেত না। এখন মোবাইলের খুদে বার্তার মাধ্যমে সবধরণের খবর পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহারে শ্রেণিশিক্ষকের কাজ কমে যাবে। শিক্ষার্থীদের হাজিরা ডাকতে (রোল কল) হবে না। তাই শ্রেণিতে প্রথম পিরিয়ডে পাঠের কার্যক্রমের সময় বেড়ে যাবে। শিক্ষকদের উপস্থিতি ও কার্যক্রম নির্ণয় করা যাবে। তিনি আরও বলেন, এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে। এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ১০দিন অনুপস্থিত থাকলে তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে খুব সহজেই শনাক্ত করা যাবে। এরপর অভিভাবকদেরও খুদে বার্তার মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে অভিভাবকেরা সন্তানের প্রতি আরও সতর্ক দৃষ্টি দিতে পারবেন। এ ছাড়া উপবৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় উপস্থিতিও বের করা সহজ হবে, যা খাতা দেখে বের করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তিনি দাবি করে বলেন, এ পদ্ধতি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে এই উপজেলার শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।

এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে মা ও অভিভাবক সমাবেশ স্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। চালনা কেসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষিকা আঞ্জুমানারা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। এতে অংশ নেন শিক্ষার্থী ও প্রায় দুই শতাধিক অভিভাবকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads