• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বাকসু : ২১ বছর ধরে  শিক্ষার্থীরা অধিকারবঞ্চিত

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

বাকসু : ২১ বছর ধরে শিক্ষার্থীরা অধিকারবঞ্চিত

  • সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৯

১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ এর নির্বাচন হয়। এরপর বিভিন্ন কারণে ২১ বছর হলো আর নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেনি প্রশাসন। বাকসুর জন্য বরাদ্দ ১৬টি কক্ষ এখন অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

যদিও প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ছাত্র সংসদ ফি। এদিকে বাকসু না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের সুযোগ-সুবিধা তথা অধিকারের কথা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতার মধ্যে থাকছে না। বাকসুকে কেন্দ্র করে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় তা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নানা দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচনের দাবি উঠেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনও বাকসু নির্বাচন চাচ্ছে। নির্বাচন চাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও। তবে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাদের মধ্যে বাকসু নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ডাকসু নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তারা বলছেন, নির্বাচন হলে কী হবে সবাই জানে। কাজেই আমরা নির্বাচনে যাব না। এদিকে বাম সংগঠনগুলো বরাবরই বাকসু নির্বাচন চেয়ে আসছে। এ দাবিতে দেয়াল লিখন, পোস্টারিং, প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেওয়াসহ বিক্ষোভ মিছিল করে আসছে তারা।

জানতে চাইলে বাকসুর সর্বশেষ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আরিফ জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কথা বলার বিধিবদ্ধ কেউ নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. নাজমুল হক স্বপন বলেন, আমাদের সময় সাংস্কৃতিক দল খুবই শক্তিশালী ছিল। বাকসুর বার্ষিকী প্রকাশনাও ছিল উঁচুমানের। আজ সেসব স্মৃতির অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল যে কোনো ছাত্র সংগঠনেরই ছাত্র অধিকার এবং শিক্ষা অধিকার নিয়ে ভূমিকা থাকবে—এটা সবাই আশা করে।

বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংঘের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের ইবনে কামাল বলেন, শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতি ও সাহিত্য ভুলে গেছে। ফলে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবিকতা নষ্ট হচ্ছে। সামাজিক অনাচার বাড়ছে। ছাত্র সংসদ থাকলে শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়বে। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ ফিরে পাবে। সারা দেশ উপকৃত হবে। নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রবাল রায় প্রান্ত বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য বাকসু নির্বাচন অপরিহার্য। ছাত্রদের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্যও বাকসু প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি বাকসু নির্বাচন। তবে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনির মুখে ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ডাকসুতে কী হয়েছে, আমরা সবাই দেখেছি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাকসু নির্বাচনের অনুমতি দিলেও আমরা যাব না।

মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বাকসু না থাকায় আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাকসু থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হয়। বাকসু নেই বলে আমাদের দাবিগুলো প্রশাসনের কাছে সব সময়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাকসু নির্বাচনের বিকল্প নেই। ছাত্র সংসদ হলে পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা, নেতৃত্ব ও প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। ছাত্র সংসদ না থাকায় এগুলো হচ্ছে না। আমাদের দাবি অনতিবিলম্বে বাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে শিগগিরই বাকসুর নির্বাচন দেওয়া হবে। নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads