• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ইবিতে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

ইবিতে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ

  • ইবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ আগস্ট ২০১৯

শোকের মাসেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। দলীয় কর্মীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ছাত্রদের আবাসিক হল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রায় দুইঘন্টা ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এ সময় নেতাকর্মীদের হাতে লোহার রড, কাঠের চলা, পাইপ, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। ঘটনার এক পর্যায়ে গুলি ও দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। এই ঘটনায় উভয় গ্রুপেরই অন্তত সাত কর্মী আহত হয়েছেন।

আহত তিনজনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এতে বিভিন্ন হলে অবস্থান নেয় দুই গ্রুপের কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে, সাংগঠনিক কাজে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব সাদ্দাম হোসেন হলের ২৩৫ নম্বর রুমে যান। এসময় তার সাথে প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী ছিলেন। এদিকে ওই রুমে থাকেন ছাত্রলীগেরই সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মী মুশাররফ হোসেন নীল।

নীলের অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা তার রুমের দরজায় লাথি মারতে থাকে। এতে তিনি রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন কুমার দাসসহ অন্যরা নীল ও তার রুমমেট শিমুলকে চড়-থাপ্পড় দেয়।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব। তিনি বলেন, সাংগঠনিক যোগাযোগের উদ্দ্যেশ্যে আমি ওর সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। একপর্যায়ে ওরা সদলবলে আমাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে।

এদিকে, নীল একপর্যায়ে হল থেকে বেরিয়ে তার গ্রুপের নেতাকর্মীদের ফোন করে ডেকে নেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ বিদ্রোহী গ্রুপের আলমগীর হোসেন আলো, জুবায়ের, অনিক, বিপুল মিজানসহ অন্যান্যরা সাধারণ সম্পাদক রাকিবের সাথে অশ্রাব্য বাক্য বিনিময় করেন এবং একপর্যায়ে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করেন। এতে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে সুমন কুমার ও রাব্বী নামের দুই কর্মী গুরুতর আহত হয়। এতে জিয়া মোড় এলাকা থমথমে হয়ে ওঠে।

ঘটনার জেরে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু হলের সামনে অবস্থান নেয় এবং সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরা জিয়া মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় উভয় গ্রুপই পরস্পরের দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। এতে ধাওয়া খেয়ে সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরা আবাসিক হলের ভেতর গিয়ে কলাপসিবল গেট আটকে দেন। পরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ক্যাফেটরিয়া এলাকা ও হল এলাকা চক্কর দেয় বিদ্রোহী গ্রুপের কর্র্র্মীরা। এসময় তারা বিভিন্ন হলে ঢোকার চেষ্টা করে বলেও জানা যায়।

ঘটনার একপর্যায়ে লালন শাহ হল ও জিয়া হলের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় নেতাকর্মীরা।

পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন ও সহকারী প্রক্টর এসএম নাসিমুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ঘটনাটি একেবারেই অনাকাঙ্খিত। আমরা ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে কোন হলে কিংবা হলের রুমে যেতেই পারি। কিন্তু কিছু অছাত্র ও বহিরাগত এটিকে ভিন্নখাতে পরিচালিত করতে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও ইবি থানা পুলিশের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো বলেও দাবি করেন।

এদিকে সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ দিয়েছে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতারা। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং ক্যাম্পাসের আবাসিক হলে অবস্থানরত বহিরাগত ও অছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একইসাথে সংবেদনশীল সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আনিছুর রহমানের অপসারণ দাবি করেন ছাত্রলীগের নেতারা।

অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘ছাত্রলীগ নাম নিয়ে শোকের মাসে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ নেই। প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রভোস্টদের সাথে আলোচনা করে ক্যাম্পাসে অছাত্র-বহিরাগত নিয়ন্ত্রনে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’   

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads