• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
জাবি উপাচার্যের গাড়ি বরাদ্দ একটি তবে ব্যবহার করেন চারটি

জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলাম

ফাইল ছবি

শিক্ষা

জাবি উপাচার্যের গাড়ি বরাদ্দ একটি তবে ব্যবহার করেন চারটি

  • শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প তথা মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজের জন্য ১৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সেই টাকা থেকে ঈদ সালামি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করছেন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। তবে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতরে বাইরে এখন জনগণের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জাবি ইস্যু। সেই ইস্যুকে আরও উত্তপ্ত  করেছে উপাচার্যের নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বেশ সৌখিন ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করে আসছেন বলে জানা গেছে। তাই নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো চলছেন জাবির এই উপাচার্য। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুয়ায়ী, একজন উপাচার্যের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পরে দেশের প্রথম এই নারী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি গাড়ি ব্যবহার করা শুরু করেন। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে শিক্ষকদের সমালোচনার মুখে তিনি একটি গাড়ি কমিয়ে ৩টি গাড়ি ব্যবহার করা শুরু করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম নিজে চলাচলের জন্য পাজেরো ব্র্যান্ডের (ঢাকা মেট্টো ঘ ১৫-২২০৭) গাড়িটি ব্যবহার করেন। ফিল্ডার (ঢাকা মেট্টো গ ৩৩-৯৪৭৬) এবং ল্যান্সার (ঢাকা মেট্টো গ ২০-২৩৬৯) ব্রান্ডের অপর দু’টি গাড়ি যথাক্রমে উপাচার্যের স্বামী ও ছেলে ব্যবহার করেন। এছাড়া প্রথম দিকে উপাচার্যের পুত্রবধূও একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন।

এ দিকে উপাচার্যের একটি গাড়ির জন্য প্রতি মাসে ৭০০ লিটার তেলের খরচ বহন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিস। এছাড়া উপাচার্যের ছেলে ও স্বামীর চলাচলের জন্য ব্যবহৃত বাকি ২টি গাড়ির তেলের খরচও বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হয়। কয়েক মাস আগে নেত্রকোনায় উপাচার্যের স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। পরে সেই গাড়ি মেরামত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসকে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয়।

উপাচার্যের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপাচার্যের গাড়ির জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩২ টাকা এবং উপাচার্যের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য ব্যয় হয় ৬ লাখ ২১ হাজার ৭৯৫ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উপাচার্যের গাড়ির জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয় ৫ লাখ ৭ হাজার ৪৩৮ টাকা এবং উপাচার্যের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য ব্যয় হয় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৪০ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উপাচার্যের গাড়ির জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয় ৫ লাখ ৯১ হাজার ৫৯৯ টাকা এবং উপাচার্যের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য ব্যয় হয় ৬৫ হাজার ৪২ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপাচার্যের গাড়ির জ্বালানি বাবদ ব্যয় হয় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩২ টাকা এবং উপাচার্যের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য ব্যয় হয় ৬ লাখ ২১ হাজার ৭৯৫ টাকা। বিগত ৪ বছরে শুধু উপাচার্যের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও জ্বালানি বাবদই ব্যয় হয়েছে ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩ টাকা।

এছাড়াও গত ৪ বছর ধরে উপাচার্যের স্বামী এবং ছেলের ব্যবহৃত ২টি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও জ্বালানির ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে আসছে। তবে সে ব্যয়ের হিসাব জানা যায়নি। এসব কারণে প্রতি বছর পরিবহন খাতে কোটি টাকা ভর্তূকি দিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। 

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন গাড়িচালকসহ উপাচার্যের বাসায় মোট কর্মচারী রয়েছে মোট ১৩ জন। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রো-উপাচার্যের বাসায় কর্মচারী রয়েছে মাত্র ১ জন করে। আর উপাচার্যের বাসভবনে শুধু শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রই (এসি) সংযুক্ত করা হয়েছে ১২টি।

এসব অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে উপাচার্যের পিএস সানোয়ার হোসেনের মাধ্যমে মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads