• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমছে

সিরাজগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাশ রুমের কারনে খোলা আকাশের নিচে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম

ছবি : বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমছে

# শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ঝুকিপুর্ণ # ১৫টির ভবন নেই

  • সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০১৯

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো মেরুদনন্ড গড়ার প্রথম ধাপ। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিবেশ বান্ধব না হওয়াতে শিশু শিক্ষার্থীদের যদি শিক্ষা জীবনের শুরুতেই আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করতে হয়-তবে সেই শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় খোলা আকাশে ক্লাস করা, সংস্কারের অভাবে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পাঠ্য বই সংকটসহ নানা কারণে সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতন সমাজ শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।

সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের চর কালিদাসগাতী, রতনী, হাড়নী ও জব্ধালীপাড়া,নিমগাছী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের কক্ষগুলো ভাঙ্গা। ক্লাস করার সময় খসে খসে পড়ে পলেস্তরা। ঝড়-বৃষ্টি হলে আতঙ্কে ছোটাছুটি করত হয় কোমল শিক্ষার্থীদের। একটু বৃষ্টি হলে বইপুস্তক-পোষাক ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এমন দৃশ্য শুধু এই চারটি বিদ্যালয়ে নয় জেলার প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য এমন। সংস্কারের অভাবে এসব প্রতিষ্ঠান ঝুকিপুর্ন হয়ে পড়েছে। এসব স্কুলে ভয় ও আতঙ্কে নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও গত বন্যায় জেলার কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় আটটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টিনের ঝুপড়ি ও খোলা আকাশের নীচে করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, চলতি শিক্ষাবর্ষের আটমাস অতিবাহিত হলেও চৌহালীর হাট ঘোড়জান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেখ চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেহাইকাউলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হুইপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরাদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজাজুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরধীত পশ্চিমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ১২-১৩টি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রথম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা বিনামুল্যের বই পায়নি। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, বারবার শিক্ষা অফিসে ধর্না দিয়েও বই পাওয়া যায়নি। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে চায় না। পড়াশোনাও ঠিকমত করছে না শিক্ষার্থীরা। এতে পড়াশোনার চরম ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়াও অনেক বিদ্যালয়ে স্যানিটারী ব্যবস্থা না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুদের স্কুল সময় পর্যন্ত কাটাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য ঝুকিতেও রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা, রাহাত ও সাদিয়াসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের স্কুলের বিল্ডিংগুলো ভাঙ্গা। মাঝে-মধ্যে ছাদের খোয়া খসে খসে পড়ে। আমরা খুব ভয়ে ক্লাস করি। আবার বৃষ্টি হলে বই-খাতা, জামা ভিজে যায়। আমাদের ক্লাস করতে খুব কস্ট হয়।
অভিভাবক আফসার উদ্দিন, হানিফ উদ্দিন জানান, ছেলেমেয়ের স্কুলে পাঠিয়ে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন ছেলে মেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এভাবে ভয়-আতঙ্ক নিয়ে ছেলেমেয়ের ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না।

নিমগাছী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রুহুল আমিন বকুল জানান, বিদ্যালয়ের ভবন পরিতাক্ত ঘোষনার পরে ওই ভবনে ক্লাস করানো হয়েছে। কিন্তু এখন আর ক্লাস করানো সম্বভ হচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষ অফিসে বার বার যোগাযোগ করেও কোন ফল পাইনি। নিরুপায় হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকরা।

চৌহালীর হাট ঘোড়জান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, তার স্কুলের প্রথম শ্রেনীর ৬৮ জন শিক্ষার্থীর কেউই বাংলা বই হাতে পায়নি। বছরের শুরুতে শিক্ষা অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। এজন্য বাধ্য হয়ে পুরনো বই জোড়াতালি দিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। বই না থাকায় ছেলেমেয়েরা স্কুলেও আসতে চায় না। এতে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে।

জঞ্জালী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অসীম কুমার, আব্দুল মতিন, আব্দুস সামাদ ও চর কালিদাসগাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর ও রতনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, টিনশেড ভবনগুলো একেবারেই ভাঙ্গা। ভাঙ্গা ভবনেই জীবনের ঝুকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বৃষ্টি হলে বই-পুস্তক ভিজে যায়। রুম স্যাত স্যাতে হয়ে যায়। আর বিল্ডিং ভবনগুলোতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। মাঝে মধ্যেই পলেস্তরা খসে খসে পড়ে। এরকম আতঙ্কে নিয়ে ছাত্রদের ক্লাস করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পড়াশোনার মান যেমন খারাপ হচ্ছে তেমনি অভিভাবকরাও ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করায় ধীরে ধীরে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী কমে যাচ্ছে। এঅবস্থায় শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে দ্রুত ঝুকিপুর্নভবনগুলো মেরামতসহ পুননির্মাণের দাবী তাদের।

জেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা জানান, ঝুকিপুর্ন ভবনগুলো মেরামত ও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ভবনগুলো পুনঃনির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার বা পুননির্মাণ করা হবে। এছাড়া ঝুকিপুর্ন ভবনে ক্লাস করার নিষেধ রয়েছে। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কোন বিদ্যালয়ে ঝুকিপুর্ণ ভবনে ক্লাস নেয়া হয় তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads