• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
জাবির অচলাবস্থা কাটছে না, নতুন কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

জাবির অচলাবস্থা কাটছে না, নতুন কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা

  • জাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর ২০১৯

জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে তার পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও আসেনি কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ। 

এরমধ্যে বন্ধ হল খোলার দাবিতে ১ সপ্তাহ আন্দোলন স্থগিত রেখেছিল আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কোনধরনের অগ্রগতি না আসায় উপাচার্যের পদত্যাগ ও আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ তিন দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার শাহবাগের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবেন তারা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের সমন্বয়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।

এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনতিবিলম্বে হল ভ্যাকেন্টের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ তিনদফা দাবিতে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শনিবার বিকেল তিনটায় বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থী ও গুণীজনদের নিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।  

তাদের তিন দফা দাবি হলো, উপাচার্যের প্রত্যক্ষ মদদে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার ও মামলাবাজ উপাচার্যের অপসারণ, হল ভ্যাকেন্টের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের দেশীয় আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ। 

এদিকে, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

এদিকে,  হল খুলে দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করতে গত সপ্তাহে উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি দিয়ে দেখা করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। কিন্তুু তাতেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসে নি কোনো সিন্ধান্ত। 

শিক্ষার্থীদের দাবি, দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকার ফলে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম এবং তৈরি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সেশনজট। একই সাথে স্নাতক ও  স্নাতকোত্তর পরীক্ষা ও ফলাফল স্থগিত থাকায় শিক্ষার্থীরা চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
  
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ সচল করার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও সরব বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এমনকি "আমরাই জাহাঙ্গীরনগর" নামক একটি গ্রুপে আন্দোলনের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। সাথে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিও দিনের পর দিন জোরদার হচ্ছে। 

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ  বিভাগের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসের আশপাশে গেরুয়া, ইসলামনগর, বটতলা বাজার প্রতিটি জায়গা এক একটা শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পাসের আশপাশে যেসব বড় ভাই-আপু থাকে পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরিটাই তাদের সম্বল। সামনে বিসিএসের রিটেন। দয়া করে হলগুলো আর লাইব্রেরিটা খুলে দিন।’

সুলতান আজিজুল নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দ্রুত একটা সমাধানে আসেন, হলগুলো খুলে দেন, অনেক ছেলেরে দেখি একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গেরুয়া সারা দিন ঘোরাঘুরি করে। ব্যাগের মধ্যে থাকে একটা লুঙ্গি আর একটা গামছা, রাত হলে কোনো এক ভায়ের রুমে গিয়ে ঘুমায় আবার সকাল হলে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায়। বাড়ি যেতে পারে না, কারণ বাড়ি গেলে একমাত্র টিউশনিটা হারাবে আর এই টিউশনিটা হারালে তার পড়াশোনাটাও শেষ হয়ে যেতে পারে।

ক্যাম্পাসে রিকশাওয়ালা মামাদের মুখের দিকে তাকালে আরো বেশি খারাপ লাগে, সারা দিন রিকশা নিয়ে দাঁড়ায়ে থাকে, কোনো লোক নেই। আপনাদের স্বার্থের জন্য হাজার হাজার পরিবার না খেয়ে মরতেছে, শত শত স্টুডেন্ট তাদের টিউশনি হারাচ্ছে। যদি দয়ামায়া করে লাইব্রেরিটা একটু দ্রুত খুলে দিতেন, তাহলে অনেক কৃতজ্ঞ থাকতাম, সামনে সবার বিসিএস পরীক্ষা সবার মধ্যে খুব টেনশন আর হতাশা কাজ করছে।’

ফারহাদ জামিল লিখেছেন, ‘হল ভ্যাকেন্ট আর কত দিন! হল এবং লাইব্রেরি দুইটার খুব প্রয়োজন এখন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া একটাই হল খুলে দিক দ্রুতই। টিউশনের জন্য বাড়িও যাওয়া যাচ্ছে না, আর উদ্বাস্তু হয়ে আশপাশে থাকতে হচ্ছে। হল ও লাইব্রেরি দ্রুত খুলে দেওয়া হোক।’

আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন লিখেছেন, ‘মাননীয় ভিসি ম্যামের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, হলগুলো খুলে দেন দয়া করে। অনেক সমস্যা আসবে সেগুলো সুষ্ঠুভাবে সমাধান করে কীভাবে সুশৃঙ্খলভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যায় সে জন্যই আপনাকে ওই চেয়ারে বসানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের হল ভ্যাকেন্ট করে কৌশলে চেয়ার ঠেকানোর জন্য নয়, দয়া করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর কথা ভাবেন। এই অনুরোধ বামসহ যারা মাঠে আন্দোলন করছেন তাদেরও। আপনারাও কীভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করা যায় সেটা ভাবুন। কারণ যে ছেলেটা ক্যান্টিনে তিন বেলা খাবে, লাইব্রেরি গিয়ে বিসিএস/চাকরির পড়া পড়ে তার কাছে আপনার এই আন্দোলনও ফলদায়ক কিছু নয় বরং হল ভ্যাকেন্ট তার জন্য অভিশাপ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads