• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
হারিয়ে যাচ্ছে শিশুর আনন্দময় শৈশব 

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

শিক্ষা

প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা

হারিয়ে যাচ্ছে শিশুর আনন্দময় শৈশব 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা শিশুদের আনন্দময় শৈশব কেড়ে নিচ্ছে। এই পরীক্ষা শিশুদের জন্য একটি মানসিক চাপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ বয়সে তাদেরকে জিপিএ-৫-এর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে। এটা মেধা বিকাশের কোনো মাধ্যম হতে পারে না। বরং শিক্ষার্থীরা যে সময়ে খেলাধুলা করার কথা ছিল সে সময়ে তাকে গাইড মুখস্থ কিংবা প্রাইভেট মাস্টারের কাছে বসে থাকতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, উন্নত বিশ্বে এ জাতীয় কোনো পরীক্ষা হয় না। শিশুদের মেধার ক্রমবিকাশে এটি বড় বাধা। এ সময় একজন শিশুর যে পরিমাণ বিনোদন, খেলাধুলা ও আনন্দ দরকার, এ পদ্ধতির কারণে সেটি অনেকটা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

সাবেক এ উপাচার্য শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ণয়ে বার্ষিক পরীক্ষাকে সামনে আনেন। তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থী সমান মেধার হয় না। এ ক্ষেত্রে তাদের পড়ার মান নির্ণয়ে বার্ষিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু থাকতে পারে এবং অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে তাকে একটি পাবলিক পরীক্ষার সম্মুখীন করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন হলে দেশে একটি একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠত। হঠাৎ করে পঞ্চম ও অষ্টমে পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করা হলো। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী অন্তত পঞ্চম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা হওয়া উচিত নয়।

এদিকে ২০১৯ সালের পিইসি পরীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছে ১১৭ জন। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২৬ জন এবং ইবতেদায়িতে ৯১ জন। বহিষ্কৃতদের সবাই ভুয়া পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকেও জানানো হয়েছে। তারা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল না। তাদের প্রায় সবাই এবারের জেএসসিতে অংশ নিয়েছিল। তারা অন্যের নামে পরীক্ষা দিতে এসেছিল।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, বেসরকারি সাহায্য সংস্থা পরিচালিত স্কুলের শিক্ষার্থী এরা। এদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মাঠপর্যায়ে।

জানা গেছে, এবারের পরীক্ষার শেষ দিনে প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে অনুপস্থিত ছিল এক লাখ ৪৮ হাজার ৯০৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাথমিকে অনুপস্থিত ছিল বা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ১ লাখ ৬৪৩ জন। আর ইবতেদায়িতে অনুপস্থিত ছিল ৪৮ হাজার ২৬১ জন। এরা সবাই সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছিল।

প্রাথমিক স্তরেই দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়াকে আশঙ্কাজনক ও হতাশার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষায় এরা কেন অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকল, এর কোনো ব্যাখ্যা বা জবাব নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা দেশের প্রাথমিক শিক্ষার নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনাকারী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) কাছে। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারের এত উদ্যোগের পরও বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি বা ঝরে পড়ে। এটা হতাশাজনক।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কর্মরত এনজিওগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতার প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সমাপনী পরীক্ষা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এতদিন যতটা উৎসব ও আনন্দময় ছিল, এখন এটি ফিকে হয়ে গেছে। কারণ, সমাপনী পরীক্ষা এখন তাদের মধ্যে বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সমাপনীকে ঘিরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার, নোট গাইড এবং এক শ্রেণির শিক্ষকের মধ্যে ভয়ানক বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। এগুলোকে সামাল দেওয়া রাজধানীর অভিভাবক ও উচ্চবিত্তের জন‌্য সম্ভব হলেও, নিম্নবিত্ত ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য এটি এখন বোঝা। এ কারণেই চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে পৌঁছানোর পর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে পারছেন না। এর ফলে ঝরে পড়ছে বেশি।

কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললে তারা দাবি করেন, সমাপনী পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সমাপনী হলে জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষা কেন? আর জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষা চালু থাকলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা কেন? এর যে কোনো একটি পরীক্ষা চালু থাকতে পারে। কোমলমতি শিশুদের আনন্দ পাঠ বা খেলাধুলার মাধ্যমে শেখানো উচিত। বাচ্চাদের শৈশব এখন আনন্দের বদলে বিষময় হয়ে উঠেছে। এটি কখনো মেনে নেওয়া যায় না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads