• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বই উৎসব হয়েছে শ্রেণি কক্ষে, বিদ্যালয়ের মাঠ মেলার দখলে

গাজীপুরের শ্রীপুরে পৌর শহরের মাওনা বহুমখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ মেলার দখলে

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

শিক্ষা

বই উৎসব হয়েছে শ্রেণি কক্ষে, বিদ্যালয়ের মাঠ মেলার দখলে

  • শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০২০

অপেক্ষায় ছিল দুই হাজারের বেশি কোমলমতি শিক্ষার্থী। রাত পোহালেই সারা দেশেরে ন্যায় বই উৎসবে মাতবে সবাই। মাঠ ভর্তি সহপাঠিরা আনন্দ আর ফুর্তিতে হইহুল্লুর করবে। নতুন বইয়ের গন্ধে নতুন বছরের প্রথম সকাল উপভোগ করবে অন্যরকম আনন্দে। তবে সে উৎসবে গুড়েবালি। প্রিয় স্কুলের মাঠটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে বস্ত্র মেলার নামে। সকল আনন্দ উৎসব মাটি হয়ে গেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। নিরুপায় শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে (খুপড়ি ঘরে) বসেই নতুন বই গ্রহন করল।

এমনি ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে পৌর শহরের মাওনা বহুমখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাংলাদেশ হস্ত ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন এ আয়োজন করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এলাকাবাসি ক্ষুব্ধ হয়ে মেলা বন্ধের দাবিতে মেলাস্থলে এসে বিভিন্ন প্রস্তুতকৃত স্টলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ আসে।

এ নিয়ে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীদের বই উৎসবের এমন আনন্দকে নষ্ট করায় দায়িদের বিচার চেয়েছেন সবাই। মেলা বন্ধের দাবিতে আজ বিকালে স্থানীয়রা মেলার স্থলে এসে ভাঙচুর করেছে। এ মেলা বন্ধের হুশিয়ারি দেন এলাকাবাসি।

ক্ষুব্দ অভিভাবকরা বলেন, বছর শুরু হলে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা হয়ে থাকে। সারা বছর লেখাপড়ার চাপে থাকা ছেলেমেয়েরা বছরের প্রথম দিকে একটু সময় পায় খেলাধুলায় আনন্দ করতে। এবার স্কুলের মাঠ ভাড়া দিয়ে সে সব সুযোগ নষ্ট করা হয়েছে। বই উৎসবেও শিক্ষার্থীরা আনন্দ করতে পারেনি। নতুন বই শ্রেণি কক্ষ থেকে নিয়ে ঘরে ফিরেছ শিশুরা। মাঠে বিভিন্ন গর্ত করে খুঁটি ঘেঁড়ে মাঠের স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট করে দিয়েছে মেলা আয়োজকরা। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আগামী কয়েক বছর এ মাঠে কোনো প্রকার খেলাধুলা করা যাবেনা। মাঠের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীরাও এ মাঠে চলতে পারবে না।

মাওনা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ ফরিদ বলেন বিলাশ এ মাঠটি স্থানীয় ঈদগাহ মাঠ,মাওনা হাইস্কুল মাঠ ও জেএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। এ আয়োজনে তিন পক্ষেরই অনুমতি প্রয়োজন। মেলা আয়োজন কর্তৃপক্ষ কার কার অনুমতি নিয়েছে আমার জানা নাই।

স্থানীয়রা জানান, মাওনা জিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাওনা বহুমখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। জাতীয় বই উৎসবে সবাই শ্রেণি কক্ষ থেকে বই নিয়েছে। শিশুদের সব আনন্দ নষ্ট করেছে এ মেলার আয়োজন। আমরা এ মেলার কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি।

মাওনা জেএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হালিম বলেন, এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে বই দিয়েছি। মাঠের অভাবে নিরুপায় হয়েই এ সল্প পরিসরে বই বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা খুশিমত বই উৎসব করতে পারেনি। মাঠ মেলার জন্য বন্ধ থাকায় এ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেন এ প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ হস্ত ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবদুল গনি মিয়া বলেন সকল আইন মেনে এ আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন সকল প্রশাসনের কাছ থেকে, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

মাওনা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান সিরাজ বলেন, আমরা ডিসি স্যারের অনুমতি পত্রের প্রেক্ষিতে অনুমতি দিয়েছি। তিনি আরো বলেন আগামী ১০ জানুয়ারি আমাদের স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠার থেকে বেঞ্চ আনতে হবে। পরে এ সব বেঞ্চ মাঠে রেখে সিট বন্টনের কাজ করতে হবে। তাই ১০ তারিখের পরে এ মাঠ কোনো ভাবেই বন্ধ করে রাখা যাবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন আমরা শিক্ষা সফরে চলে গেলে মেলা কর্তৃপক্ষ এ সুযোগে তাদের নির্মান সামগ্রী দিয়ে মাঠ অবরুদ্ধ করে ফেলে । তারা এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো কথা বলেনি। সামনে আমাদের স্কুলে এসএসসি পরীক্ষা হবে এ নিয়ে চিন্তায় আছি। অবশ্যয় মাঠ ছাড়তে হবে ১০ জানুয়ারি মধ্যেই।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, আমি শুনেছি মেলা আয়োজন কমিটি যথাযথ নিয়ম মেনেই এ অনুমতির চেষ্টা করছে। তবে আজও (বৃহস্পতিবার) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কোনো প্রকার চিঠি পাইনি। তিনি বলেন স্কুল কমিটি না চাইলে কেউ তাদের মাঠ ব্যবহার করতে পারবেনা। এটা স্কুলের নিজস্ব ক্ষমতায় পড়ে। রোববার এ ব্যাপারে সুনিদিষ্ট ভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য (গাজীপুর-৩) মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এমন ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপিঠের মাঠ বন্ধ করে মেলার আয়োজন অন্যায়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলাধলার স্থানে প্রতিবন্ধকতা করা তৈরি কারো অধিকার নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ মেলা বন্ধে আমি প্রসাশনকে নির্দেশ দিয়েছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads