• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বেপরোয়া হয়ে পড়েছে চবি ছাত্রলীগ

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা

বেপরোয়া হয়ে পড়েছে চবি ছাত্রলীগ

  • জুবাইর উদ্দিন, (চবি)
  • প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারি ২০২০

বছরের শুরুতেই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ। কথায় কথায় বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। নিজেদের মধ্যকার আধিপত্য, অন্তর্কোন্দল, নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে লিপ্তসহ নানা বিতর্কিত ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে শিরোনামে মধ্যমণি হয়েছে এ শাখা। একের পর এক অপকর্মের ফলে বিনষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। বহিষ্কার, সমঝোতা, আটক করেও টেনে ধরা যাচ্ছে না অস্থিরতার লাগাম। এতে করে সংগঠনের অর্জন, সাফল্য ম্লান হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রলীগকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে নেতিবাচক মনোভাব।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শাখা ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও নেতা-কর্মীদের কাউন্সিলিং করা হলে পুনরায় প্রাণের সঞ্চার হবে এই শাখাটিতে। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে এই কোন্দল চলে এলেও তা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশাসন অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না করে সমঝোতাকেই সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। ফলে শাস্তি না পাওয়ায় অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে আছে।

বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘ছাত্ররা বারবার নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজির কোনো স্থান হবে না। আমরা নিয়মিত শাস্তি দিচ্ছি। এরপরও যদি না হয়, তবে আরো কঠোর হব। যারা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করবে তাদের কোনো ছাড় নয়।’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েক দফা সংঘর্ষ, প্রতিপক্ষের কর্মীকে মারধর ও অবরোধের মাধ্যমে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত রেখেছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ। এসব ঘটনায় অন্তত ১০ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। সর্বশেষ পূর্ব ঘটনার জেরে গত সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ঝুপড়িতে আরএসের দুই কর্মী ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ আরমান ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এমরান আশিককে মারধর করে সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মীরা। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপুর পদত্যাগ চেয়ে অবরোধের ডাক দেয় আরএস গ্রুপ। এর আগে গত বুধবার ছাত্রলীগ সভাপতি অনুসারী সিএফসি ও মোহাম্মাদ ইলিয়াসের অনুসারী বিজয় গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলার জের ধরে উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গ্রুপের পাঁচ কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে দায়ী করে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয় বিজয় গ্রুপ। অবরোধের প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবার পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে অবরোধ শিথিল করে গ্রুপটি। এছাড়া গত ২০ জানুয়ারি প্রক্টর অফিসে চেয়ারে বসা নিয়ে আরএসের এক কর্মীকে মারধর করে সিক্সটি নাইনের এক কর্মী। এ ঘটনার জের ধরে ২২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন সংলগ্ন একটি খাবারের দোকানে সিক্সটি নাইন গ্রুপের তিন কর্মীকে মারধর করে আরএসের কর্মীরা। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে দোষীদের আটকের দাবিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটক ও শহরগামী শাটল ট্রেন প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে দোষীদের আটকের আশ্বাস দিলে তারা শাটল ও মূল ফটক ছেড়ে দেয়। চলমান একের পর এক সংঘর্ষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিভিন্ন গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি যথাসময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় অনেক পরিশ্রমী ও ত্যাগী কর্মী সাংগঠনিক পদ-পদবি থেকে বাদ পড়বেন। রাজনৈতিক কোনো স্বীকৃতি না পাওয়ার ক্ষোভে সামান্য ঘটনা সংষর্ষে রূপ নিচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরপরই হল ও অনুষদ কমিটি গঠিত হলে সাংগঠনিকভাবে কর্মীরা শৃঙ্খলায় ফিরে আসবেন।

জানা যায়, চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির প্রায় দেড় বছর পর গত বছরের ১৪ জুলাই রুবেলকে সভাপতি ও টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে কমিটি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় সেলে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু কমিটির মেয়াদের বেশির ভাগ সময় চলে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় কর্মীদের মধ্যে পদহীনতার ক্ষোভ ও হতাশায় এসব সংঘর্ষ বাড়ছে। কমিটি হলে সাংগঠনিকভাবে শৃঙ্খলায় ফিরে আসবেন তারা।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপু বলেন, ‘কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য আমি ও সভাপতি কাজ শুরু করেছিলাম। কিছু কর্মকাণ্ড হাতেও নিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় বাধা দেয় যারা কমিটি করছে তারাই। যেহেতু দায়িত্বে আছি, অবশ্যই কমিটি করব।’ ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল রুবেল বলেন, ‘আমরা কমিটির জন্য কাজ করছি। অতি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করব।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads