• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষা

অবশেষে কার্যকর হচ্ছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা

আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

জট কেটেছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে। অবশেষে সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একমত হয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০২০-২০২১) থেকে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে কমিশনে অনুষ্ঠিত গতকাল বুধবারের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমবে। শৃঙ্খলা ফিরবে ভর্তি ব্যবস্থায়।

পূর্বনির্ধারিত সভায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুস সোবহান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন আহম্মদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমানে প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি এবং আর্থিক ব্যয় নিরসনের পাশাপাশি বিশ্বায়নের এ যুগে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে এ ধরনের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণের উদ্যোগ যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আশা করছি মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে। ভর্তির এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে। ভর্তি পরীক্ষার রূপরেখা ও পরীক্ষা পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় যথাসময়ে জানানো হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ইতোপূর্বে যেভাবে ১ম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে, তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং পঠন-পাঠন প্রক্রিয়ার ভিন্নতা সত্ত্বেও তাদের ভর্তি পরীক্ষাসমূহ কেবল এইচএসসি পরীক্ষায় পঠিত বিষয়সমূহের ভিত্তিতেই গৃহীত হয়ে থাকে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উচ্চ মাধ্যমিক ফল প্রকাশের পর পরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি প্রদত্ত সময় অনুযায়ী তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের একটি স্কোর করে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অভিজ্ঞ এবং সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার জন্য পৃথক তিনটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। ওই তিন শাখায় তিনদিন পৃথক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির কাজ শেষ হবে। পরে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত পদ্ধতিতে (অথবা যেভাবে তারা উপযুক্ত মনে করেন) তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনীয় শর্তাবলি সংযোজন করে পৃথক পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোরকে বিবেচনা করেই ছাত্রছাত্রী ভর্তি করবে। প্রত্যেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী অভিন্ন প্রশ্নে পছন্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি তাদের পরীক্ষা নেওয়ার সামর্থ্যের অতিরিক্ত আবেদন পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে মেধাক্রমানুযায়ী নিকটতম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিল/ভর্তি কমিটি ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তারোপ করার সুযোগ পাবে।

উল্লেখ্য, বিশেষায়িত বিভাগসমূহ যেমন- স্থাপত্য, চারুকলা ও সংগীত তাদের প্রয়োজনমতো শুধু ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার স্কোর সংযুক্ত করেই মেধাতালিকা তৈরি করবে।

প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এ জন্য আলাদাভাবে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। ভর্তি পরীক্ষাও আলাদাভাবে আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে পরিচালিত চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বিষয়ে অনাগ্রহ দেখিয়ে আসছিল।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি বাস্তবায়ন করব। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads