• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষা

স্কুলেই দেওয়া হবে নতুন পাঠ্যবই

ছাপানো বাকি ২ কোটি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

স্কুল বন্ধ রেখেই শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিত করে এবার নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল থেকে বই নিতে হবে। একেক দিন একেক শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে প্যাকেটজাত বই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। প্রতি বছরের মতো ‘বই উৎসব’ না হলেও নতুন বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বছর শেষ হতে চললেও এখনো ছাপানো হয়নি প্রায় ২০ শতাংশ বই। সংখ্যার হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় দুই কোটি।

জানা গেছে, ক্লাস ও রোল অনুযায়ী নতুন বই প্যাকেটজাত করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভিন্ন ভিন্ন দিনে ক্লাস ও রোল অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে শিডিউল দেওয়া থাকবে। নির্ধারিত দিনে শিডিউলভুক্ত ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বই সংগ্রহ করতে হবে। 

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার স্কুল থেকেই নতুন বই বিতরণ করা হবে। মাঠপর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে এ নির্দেশনা পৌঁছে দেবেন। তবে আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকায় কবে থেকে বিতরণ শুরু হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। যেসব স্কুলে এক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি এসব ক্ষেত্রে সকাল ও বিকাল আলাদা করে অভিভাবকদের বই নিয়ে যেতে বলা হবে। এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) বেলাল হোসাইন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার স্কুল থেকেই নতুন বই বিতরণ করা হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারির কথা রয়েছে।  নির্দেশনা পেলে সেটা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হবে।

জানা গেছে, বিতরণের জন্য এ বছর প্রায় ৩৫ কোটি বই মুদ্রণ করেছে সরকার। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই প্রায় ২৪ কোটি ৩৪ লাখ। বাকিটা প্রাথমিক স্তরের। ১ জানুয়ারির আগে মাধ্যমিক স্তরের সব বই না পৌঁছলেও প্রাথমিক স্তরের সব বই পৌঁছে যাবে স্কুলে স্কুলে। করোনা মহামারীর কারণে নতুন বছরের বই উৎসব ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩১ ডিসেম্বর সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকের উদ্বোধন করা হবে।

এদিকে বছর শেষ হতে চললেও এখনো ছাপানো হয়নি প্রায় ২০ শতাংশ বই। সংখ্যার হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় দুই কোটি! এনসিটিবিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো দুই কোটির মতো বই ছাপাতে বাকি রয়েছে। শেষ সময়ে এসে রাত-দিন কাজ করে এসব বই ছাপছে প্রকাশনীগুলো। তবে এই অল্প সময়ে সব বই ঠিকঠাক ছাপানো যাবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকাশক বলেন, ডিসেম্বর মাসে সামান্য সময়ের জন্যও বিশ্রাম নিতে পারিনি। একটানা কাজ করে যেতে হচ্ছে। শুরুতে বিভিন্ন কারণেই এনসিটিবি বই ছাপানোর কাজ শুরু করতে গড়িমসি করে। পরে এসে তাড়াহুড়া করে ছাপতে হচ্ছে সব বই। গেল বছরও এমনটা হয়েছে। এবারো হচ্ছে। এভাবে কাজ করতে গিয়ে বইয়ের বাঁধাই, ছাপাসহ বিভিন্ন কাজের মান খারাপ হয়। অথচ কাজটা এক মাস আগে শুরু করার নির্দেশনা দিলেও এ ঝামেলা পোহাতে হয় না। সেক্ষেত্রে আমাদেরও পরিশ্রম কম হয়।

এ ব্যাপারে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা  বলেন, এটা সত্য যে এখনো ২০ শতাংশের মতো বই ছাপানোর বাকি। কিন্তু আগামী দু-একদিনেই বই ছাপা হয়ে যাবে। ফলে বছরের প্রথম দিনে কোনো শিক্ষার্থীই বই বঞ্চিত থাকবে না। আমরা সবার হাতে বই তুলে দেব। এখনো পর্যন্ত দেশের সব বিদ্যালয়েই বই পৌঁছে গেছে।

সব শিক্ষার্থীর হাতে সময়মতো বই পৌঁছানোর বিষয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তা নাকচ করে দিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, কোনো বিদ্যালয়ে হয়তো ৫০টি বই প্রয়োজন, আমরা সেখানে দিয়েছি ১০টি বই, কিন্তু দিয়েছি। বাকি বইগুলো আগামী দু থেকে তিন দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সব শিক্ষার্থী সময়মতো বই হাতে পাবে। প্রকাশনা সংস্থাগুলো প্রতিদিন ৫০ লাখ করে বই ছাপাচ্ছে।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন প্রকাশক বলছেন, এ বছর ১৫১টি প্রিন্টিং প্রেসে ছাপানো হচ্ছে সরকারি বই। এসব প্রেস মিলিয়েও প্রতিদিন মাত্র ১০ লাখের মতো বই ছাপানো সম্ভব। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি বই ছাপানো অসম্ভব। বছরের প্রথম দিনে সব বই পাবেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো জেলায় দুই-তিনটি বিষয়ের বই বাকি থেকে যাবে। সেগুলো হয়তো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পৌঁছে যাবে। তবে এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান।

এ বছর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই এবং পাঁচটি ভাষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্যও রয়েছে নিজস্ব ভাষার প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই। পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৯৪ হাজার ২৭৫ শিক্ষার্থী নিজ ভাষায় বই পাবে। যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের বই নিজ ভাষায় পাবে তারা। আর তৃতীয় শ্রেণিতে কেবল মাতৃভাষা বইটি পাবে তারা নিজেদের ভাষায়। নিজ ভাষায় বই পেতে যাওয়া পাঁচটি নৃগোষ্ঠী হলো- চাকমা, মারমা, সাদ্রী, ত্রিপুরা ও গারো। এ বিষয়ে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সরকার তাদের নিজ ভাষায় বই তুলে দিচ্ছে। তবে সাঁওতালরা এবারো তাদের ভাষায় বই পাচ্ছে না। এছাড়া এ বছর ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর হাতে তাদের নিজ নিজ শ্রেণির ব্রেইল বই তুলে দেওয়া হবে। আগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই দেওয়া হতো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads