• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার

সংরক্ষিত ছবি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

আছে নানা ভোগান্তির অভিযোগও

প্রিপেইড মিটার বসেছে লক্ষ্যের মাত্র ২০ শতাংশ

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০১৮

বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০২০ সাল নাগাদ সারা দেশে এক কোটি প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিস্টেম লস রোধ, বিদ্যুৎ চুরি, দুর্নীতি ও গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা চার সংস্থা।

প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ পেয়েছে ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানি (ডিপিডিসি)। ইতোমধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছে ঢাকার প্রায় তিন লাখ গ্রাহক। ২০২০ সাল নাগাদ ঢাকায় মোট ১২ লাখ গ্রাহককে এই মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণের আরেক সংস্থা ঢাকা এনার্জি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) তাদের ৮ লাখ ২০ হাজারের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার গ্রাহককে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রিপেইড মিটার সংযোগ দিয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সারা দেশে ২ কোটি ২০ লাখের মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৫০০ গ্রাহককে চলতি মাস পর্যন্ত প্রিপেইড মিটার দিতে পেরেছে। এ ছাড়া আরো ৪০ হাজার মিটার ডিসেম্বর নাগাদ দিতে পারবে। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজিপাডিকো) তাদের সাড়ে ১০ লাখের মধ্যে মাত্র ৬৭ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে পেরেছে। আরো ৫ হাজার প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ চলছে, যা জুন নাগাদ শেষ হবে। প্রিপেইড মিটার স্থাপনে চার সংস্থা চলতি মাস পর্যন্ত সংযোগ দিতে পেরেছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ গ্রাহককে। সরকারের ১ কোটি প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে রয়েছে নানা ভোগান্তির অভিযোগ। আবেদনের পর সময়ক্ষেপণ, মিটার স্থাপনে টাকা আদায়, প্রিপেইড রিচার্জ কার্ডের সহজলভ্য না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংস্থার বিরুদ্ধে। ডিপিডিসির আওতাভুক্ত বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে ভোগান্তি, অনিয়মের এসব অভিযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেডের বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার ভাড়াবাসায় প্রিপেইড মিটার বসানো হয়। এ সময় বাড়িওয়ালার কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের টেকনিশিয়ানরা মিটারপ্রতি তিন হাজার টাকা করে নিয়েছে। একই অভিযোগ রয়েছে খিলগাঁও ডিভিশনের বিভিন্ন এলাকায়। ডিপিডিসির ৩৬টি এনওসির প্রত্যেকটিতে আছে একই অভিযোগ।

বাসাবো ওয়াসা রোডের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বাড়ির ১০টি প্রিপেইড মিটার বসাতে ডিপিডিসির টেকনিশিয়ানদের দিতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, মিটার বসানোর আগে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে বিলের টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু এখন কার্ড কেনা নতুন বিড়ম্বনা। নির্দিষ্ট ব্যাংক ছাড়া কার্ড পাওয়া যায় না। তাছাড়া একেক ভাড়াটিয়ার একেক সময় কার্ড প্রয়োজন হয়। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাড়িওয়ালাদের।

মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ এনওসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ সরাসরি ডিপিডিসি করছে না। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কাজ করা হচ্ছে। তারা আবার সাব-কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে মিটার বসানোর কাজ করছে। তবে মিটার স্থাপনে টাকা দাবির অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। অভিযোগের বিষয়ে আমরা প্রধান কার্যালয়কে জানিয়েছি।

ডিপিডিসি সূত্রে জানা যায়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংস্থাটিকে ২০২০ সালের মধ্যে ১২ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে হবে। সবশেষ তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৩ হাজার মিটার স্থাপন হয়েছে।

প্রিপেইড মিটার স্থাপনে অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশল মো. রমিজ উদ্দিন সরকার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গ্রাহক থেকে কোনো টাকা আদায় করার কথা নয়। গ্রাহকের চাহিদায় আগের মিটার বদলে প্রিপেইড মিটার বসাবে। তবে মিটার স্থাপনে বিদেশি তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওসিয়ন, ইনহেমিটার ও হেক্সিন দিয়েছে ডিপিডিসি। অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠান তিনটি ডিপিডিসিকে অবহিত না করে বেশ কিছু দেশি সহ-ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে। সহ-ঠিকাদার এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে স্থানীয় পর্যায়ের ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মিটার বসানোর কাজ করছে। তৃতীয় পর্যায়ের এই ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটতে পারে। সে অভিযোগের দায় সরাসরি ডিপিডিসির ওপর আসছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা সুফল পেতে শুরু করেছি। প্রিপেইড মিটার বসানোর ফলে ডিপিডিসির বিদ্যুতের সিস্টেম লস অনেক কমেছে। ৩৩ কিলোভোল্টে ২০১২-১৩ সিস্টেম লস ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, পরের বছর চলে আসে ৮ দশমিক ৯৭ ভাগ। ১৩২ কিলোভোল্টে গত ২০১৪-১৫ সালে সিস্টেম লস ছিল ৯ দশমিক ৪১, ২০১৫-১৬ সালে ৯ দশমিক ১৮ এবং গত বছর সিস্টেম লস কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪০ ভাগে। আশা করছি এ বছর সিস্টেম লস ৬ ভাগে নিয়ে আসতে পারব।’

তিনি বলেন, প্রিপেইড মিটার স্থাপনের টার্গেট পূরণ করতে এ বছর মন্ত্রণালয়ে আরো ৮ লাখ মিটারের একটা চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। জিওবি ভিত্তিতে মিটারগুলো আমাদের দেওয়া হবে। আশা করছি যে গতিতে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে আমাদের গ্রাহকও বাড়বে, বর্ধিত গ্রাহককেই আমরা প্রিপেইড মিটারের অধীনে একই সময়ের মধ্যে আনতে পারব।

ডিপিডিসির দেওয়া তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ৪৮টি ভেন্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ কার্ড বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আজিমপুর এনওসির আওতায় ছয়, লালবাগে ছয়, কাজলায় এক, খিলগাঁওয়ে তিন, মুগদাপাড়ায় পাঁচ, রাজারবাগে পাঁচ, সাতমসজিদ এনওসির আওতায় তিন, শ্যামলী এনওসির আওতায় ছয়, শেরেবাংলা নগরে তিন, স্বামীবাগে ছয় এবং তেজগাঁও এনওসির অধীনে তিন ভেন্ডিং স্টেশন রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads