বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে নেপালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। এই সমঝোতার মধ্য দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া গতি পাওয়ার আশা করছে সরকার। এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে জনগণকে অল্প পয়সায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
নেপাল থেকে ভারত হয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি ছাড়াও স্বাক্ষরিত সমঝোতার আওতায় নেপালের বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে কাঠমান্ডুতে নেপালের জ্বালানি, পানি ও সেচ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী বর্ষা মান পুন অনন্ত স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির জন্য নেপাল সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, অনেক অপেক্ষার পর এই চুক্তি হলো। এ সময় বাংলাদেশ ও নেপালের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি দুই দেশেরই উন্নয়নে সহযোগিতা আরো বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বলেন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রেই এই সহযোগিতার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে দৈনিক ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার একটি অংশ আসবে আমদানি করা বিদ্যুৎ থেকে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, নেপালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে সে বিদ্যুৎ দেশে নিতে পারবে।
সমঝোতা স্বাক্ষর শেষে নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অল্প পয়সায় বিদ্যুৎ পাব। আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৫ হাজার মেগাওয়াট আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, নেপাল এখন ভারত থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করলেও আগামী ১০ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এর বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। তার দেশে বিনিয়োগ ও বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সম্ভাবনার চিত্রও তুলে ধরেন বর্ষা মান পুন অনন্ত।
বৃহস্পতিবার নেপালে পৌঁছানোর পর শুক্রবার সকালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নসরুল হামিদ। এরপর জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়াতে এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং একটি স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করবে।
জলবিদ্যুৎ তুলনামূলকভাবে সস্তা ও পরিবেশবান্ধব হলেও বাংলাদেশে এর উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে কাজ চালিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার।
নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।