• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও গ্যাস সঙ্কট

প্রতীকী ছবি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ের পরও গ্যাস সঙ্কট

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৮ আগস্ট ২০১৮

মজুত সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েই গ্যাস উত্তোলনে বেশ কয়েকটি কূপ খনন করা হয়েছে। পাশাপাশি সরবরাহ সঙ্কটের কারণে পাইপলাইন নির্মাণ করেও নতুন এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি খাতের এমন দুই প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা ব্যয় করার সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় প্রস্তাবিত ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা মেটাতে নরসিংদীর মনোহরদী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত দৈনিক ৭৫ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস পৌঁছাতে নেওয়া প্রকল্পের লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। বিভাগের পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহ সঙ্কটের কারণে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৫১ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১ হাজার ৪ মিটার নদী ক্রসিংয়ের কাজে ৪১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

আইএমইডি জানিয়েছে, পাইপলাইন নির্মাণ ছাড়াও দুটি কম্প্রেসার স্থাপনে ৮৩৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় ধরে মনোহরদী-ধনুয়া এবং এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বতীর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০০৬ সালের শুরুতে। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ বাবদ ৫১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা ছিল। এডিবির সহায়তা ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় নেমে আসায় দুটি কম্প্রেসার বাদ দিয়ে প্রকল্পের ব্যয় নামিয়ে আনা হয় ৪৫০ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। ২০০৯ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় বাড়িয়ে মেয়াদ উন্নীত করা হয় ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত।  ফলে সাড়ে তিন বছরের প্রকল্প সাড়ে আট বছরে শেষ করা হয়।

প্রকল্প এলাকায় গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে শিল্প কারখানায় গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এর পরও বিদ্যমান কারখানায় গ্যাসের চাপ খুবই কম। অনেকেই সিলিন্ডারে করে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রাখছেন। তবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার শুরু হলে নতুন পাইপলাইনটি বেশ কাজে আসবে বলে তিনি মনে করেন। 

সম্প্রতি প্রকল্পটির সুফল পর্যালোচনা করতে প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষা পরিচালনা করে আইএমইডি। সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণে ৭ ধরনের জটিলতা ছিল। এডিবির ঋণ কার্যকরে ৬ মাস দেরি হয়। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে আইনি জটিলতা কাটাতে সময় লেগেছে ৩ বছর। পাইপলাইন সরবরাহের জন্য গ্যাস ট্রন্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) চায়না পাইপলাইন প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চুক্তি মূল্যে পাইপলাইন সরবরাহে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে জিটিসিএল কর্তৃপক্ষ চুক্তিটি বাতিল করে। পরবর্তীতে পুনরায় আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়া করতে ২ বছর সময় চলে যায়। টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন যথাযথভাবে পূরণ না করায় জিটিসিএল কর্তৃপক্ষকে ইনডাকশন ব্যান্ড কেনার জন্য তিন বার এবং কোটিং ম্যাটেরিয়াল কেনার জন্য দুইবার দরপত্র আহ্বান করতে হয়। ফলে এক বছর দেরি হয়। এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে তিনগুণ বেশি সময় লেগেছে।

প্রতিবেদনে আইএমইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরবরাহ সঙ্কটের কারণে সঞ্চালন পাইপ লাইনটি সর্বোচ্চ ক্ষমতায় গ্যাস সঞ্চালন করতে পারছে না। নতুন পাইপলাইন থেকে গ্যাসের সংযোগ নেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিনিধিদের তথ্য নিয়ে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা গেছে। তবে গ্যাসের সরবরাহ আশানুরূপ না হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন দিগুণ হতে পারত বলে তারা জানিয়েছেন।

প্রকল্পের শতভাগ সুফল পেতে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনটি সর্বোচ্চ সঞ্চালন ক্ষমতায় ব্যবহারের সুপারিশ করেছে আইএমইডি। এ লক্ষ্যে উৎসে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এর আগে পৃথক প্রতিবেদনে আইএমইডি জানায়, খুলনায় গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে ১৬৩ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ হলেও মজুত না থাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে না খুলনায়। ফলে পেট্রোবাংলার ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণে ৮৩২ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের সুফল পাওয়া যায়নি।

একইভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ও মজুত গ্যাসের প্রকৃতি বিবেচনা না করেই কূপ খনন করায় সালদা গ্যাস ক্ষেত্র ৩, ৪ ও ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র ৪, ৫ উন্নয়নে ২৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমইডি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads