• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বন্ধ সার কারখানা এলএনজিতে সচল

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)

সংরক্ষিত ছবি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বন্ধ সার কারখানা এলএনজিতে সচল

# ৮ মাস পর উৎপাদনে যাচ্ছে সিইউএফএল # সব কারখানায় দেওয়া হবে গ্যাস সংযোগ

  • কাওসার আলম
  • প্রকাশিত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ফলে সঙ্কট কাটছে ইউরিয়া সার কারখানাগুলোর। বছরের বেশিরভাগ সময় গ্যাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকা কারখানায় এলএনজি সরবরাহ শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। গত মঙ্গলবার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে চিটাগং ইউরিয়া সার কারখানায় (সিইউএফএল)। আগামী সপ্তাহে আরেকটি এলএনজি বহনকারী জাহাজ চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা রয়েছে। ওই এলএনজি সরবরাহ শুরু হলে বন্ধ থাকা বাকি কারখানাতেও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।

সিএফইউএল-এ গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিসিআইসির পরিচালক শাহীন কামাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর উৎপাদন শুরু হবে কারখানাটিতে।’ তবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হলেও উৎপাদনে যেতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে বলেও জানান তিনি। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে এ কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘শুধু গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণেই সিইউএফএলের উৎপাদন বন্ধ থাকছে, এমনটি নয়। বিভিন্ন সময় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পর কারিগরি ত্রুটির কারণেও উৎপাদনে যেতে পারেনি কারখানাটি। এলএনজি আমদানির পর নতুন করে আবার সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।’ কারখানাটিতে শুধু এলএনজি দেওয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলএনজির জন্য আলাদা কোনো সংযোগ নেই। জাতীয় গ্রিডে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও আমদানিকৃত এলএনজি মিশ্রিত হয়ে একটি সংযোগ লাইনের মাধ্যমে কারখানায় দেওয়া হচ্ছে।’ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আনোয়ারায় অবস্থিত শিকলবাহা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিইউএফএল ও কাফকোতে শুধু এলএনজি সরবরাহে একটি আলাদা লাইন তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গত ১৮ আগস্টে দেশে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শুধু চট্টগ্রামে এ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পাইপলাইনের কাজসহ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পর জাতীয় গ্রিডে শুরু হবে এলএনজি সরবরাহ। বর্তমানে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর আরো একটি এলএনজিবাহী জাহাজ পৌঁছার কথা রয়েছে। ওই জাহাজ থেকে সরবরাহ শুরু হলে তখন চট্টগ্রামে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জিয়াউর রহমান খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ওই জাহাজ থেকে সরবরাহ শুরু হলে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাসের চাহিদা কমে যাবে। ফলে এখন যেসব ইউরিয়া সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে, সেগুলোতেও দেওয়া সম্ভব হবে।’

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ইউরিয়া সার উৎপাদনে মোট ছয়টি কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলো হচ্ছে- শাহজালাল ফার্টিলাইজার, চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার, যমুনা ফার্টিলাইজার, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার, ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ও পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি। এর মধ্যে বর্তমানে শাহজালাল ফার্টিলাইজার ও আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজারে গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে। গ্যাসের প্রয়োজনীয় চাপ না থাকায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে শাহজালাল ফার্টিলাইজারের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস না পাওয়ায় সক্ষমতার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সার উৎপাদন করতে পারছে বিসিআইসি। ফলে চাহিদা মেটাতে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে দেশ। উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় দ্বিগুণ দামে সার আমদানি করতে হচ্ছে। এতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে বছরের অধিকাংশ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে কারখানাগুলোর মেশিনারিজ নষ্ট কিংবা অকেজো হয়ে পড়ছে। গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পর পুনরায় চালু করতে গিয়ে প্রায়ই কারখানাগুলো নানা ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ছে। এতে কোটি কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় ঘটছে এবং উৎপাদন কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ সার কারখানার আয়ুষ্কাল অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে অধিকাংশ সার কারখানা। উপরন্তু গ্যাস না পাওয়ার কারণে কারখানাগুলো চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

বিসিআইসি যেসব পণ্য উৎপাদন করে থাকে তার মধ্যে ৮০ শতাংশই হচ্ছে সার। উৎপাদিত সারের ৮০ শতাংশই হচ্ছে ইউরিয়া। বিসিআইসির আওতাধীন যে ছয়টি ইউরিয়া সার কারখানা রয়েছে, সেগুলোতে সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামালই হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিয়ে সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে সরবরাহ করছে। আর এ কারণে সার উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads