• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
উল্টোরথে গ্যাসের উৎপাদন

ছবি : সংগৃহীত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

উল্টোরথে গ্যাসের উৎপাদন

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২২ আগস্ট ২০১৯

বিদ্যুৎ, শিল্প, গৃহস্থালিসহ সব ক্ষেত্রেই একদিকে গ্যাসের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে, সেখানে অন্যদিকে কমছে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। কিন্তু এসব আমদানি করা গ্যাসের দাম দেশে উৎপাদিত গ্যাসের তুলনায় বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস ব্যবহারকারীরা পড়ছে দুশ্চিন্তায়। আর সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর।

যদিও দেশে বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত গ্যাসের বার্ষিক উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল; কিন্তু এরপর থেকে পাল্টে গেছে উৎপাদনের হিসেব-নিকেশ। এখন প্রতি বছর কমছে গ্যাসের উৎপাদন। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তথ্য বলছে, দেশে গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) গ্যাসের বার্ষিক উৎপাদন হয়েছিল ৯৬৫ দশমিক ২ বিলিয়ন কিউবিক ফুট, যা তার আগে টানা তিন অর্থবছর ক্রমান্বয়ে কমেছে। দেশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গ্যাসের উৎপাদন ছিল ৯৭৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন কিউবিক ফুট।

পেট্রোবাংলা আরো বলছে, ২০০০-০১ থেকে ক্রমান্বয়ে দেশের গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছিল। দেশে ওই সময় গ্যাসের উৎপাদন ছিল মাত্র ৩৭২ দশমিক ২ বিলিয়ন কিউবিক ফুট, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসে রেকর্ড সর্বোচ্চ  পৌঁছায়।

এদিকে দেশে উৎপাদন কমায় কমছে গ্যাসের মজুত। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে চাহিদা। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩ হাজার ৬৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। যেখানে সরবরাহ হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এমন পরিস্থিতিতে বিগত ১০ বছরে সাত দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। শেষ দফায় দেশে গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশের প্রাথমিক ও মৌলিক জ্বালানি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তৈরি পোশাক, শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎ মূল্য থেকে শুরু করে জনজীবনের প্রায় সর্বত্র প্রভাব ফেলছে। ইতোমধ্যে গ্যাসের দামের কারণে সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়ছে। বাড়ছে পরিবহন ব্যয়, বাড়বে গৃহস্থালির রান্নার খরচও।

তবে গ্যাসের চাহিদা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব বাস্তবায়নও হচ্ছে। গৃহীত ওইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্জিত অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার ওপর পেট্রোবাংলা এবং এর আওতাধীন বিশেষায়িত কোম্পানিসমূহ নিরলসভাবে কাজ করছে।

জানা গেছে, বিগত ১০ বছরে দেশে মোট গ্যাস ব্যবহূত হয়েছে প্রায় ৯ টিসিএফ। আর নতুন আবিষ্কার হয়েছে মাত্র এক টিসিএফের মতো। এ সময় দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের  উৎপাদন বেড়েছে দৈনিক এক কোটি ঘনফুট হিসেবে, যা প্রায় পুরোটাই এসেছে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। দেশের অন্য বিদ্যমান  ক্ষেত্রগুলোর  মধ্যে  একমাত্র  ভোলা  ছাড়া  প্রতিটি গ্যাসক্ষেত্রে শেষ কয়েক বছর গ্যাসের চাপ ক্রমাগত কমছে।

অন্যদিকে চাহিদা বাড়াতে দেশে ক্রমেই বাড়ছে এলএনজি আমদানি। তবে দেশের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতি ঘন মিটারে উৎপাদন খরচ যেখানে ৭ দশমিক ৫০ টাকা, সেখানে এলএনজির খরচ পড়ে ৩৩ দশমিক ৭৫ টাকা। এ জন্য প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।

বর্তমানে বিদ্যুৎ, সার, শিল্প, বাণিজ্যিক, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি, চা বাগান এবং আবাসিক এ ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে প্রায় ৪৩ লাখ গ্রাহকের কাছে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪২ দশমিক ৯৯ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এছাড়া শিল্পখাতে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ, আবাসিকে ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ, সার কারখানায় সাড়ে ৫ শতাংশ, সিএনজিতে ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ,  বাণিজ্যিকে দশমিক ৭৭ শতাংশ ও চা বাগানে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। গত অর্থবছরে আমদানিসহ দেশে উৎপাদিত ৭০ হাজার ৪২৩ গিগাওয়াট আওয়ার বিদ্যুতের মধ্যে ৪৮ হাজার ২৭০ গিগাওয়াট আওয়ার প্রকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে উৎপাদিত হয়েছে।

গ্যাস সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, ২০৪১ সালে দেশে দৈনিক গ্যাস চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় আট হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হবে, যা প্রাকৃতিক গ্যাস কমায়, মূলত আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরশীল থাকবে। আবাসিক খাতে জ্বালানি হিসেবে আমদানি করা এলপিজি ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাবে, যেখানে ২০০৯ সালে বছরে মাত্র ৪৫ হাজার টন ব্যবহার ছিল, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে আট লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। আর ২০২৫ সালে এই চাহিদা হবে ৩০ লাখ টন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads