• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রূপপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু ২০২৩ সালে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ৬০ বছর

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর ২০১৯

দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন শুরু হবে ২০২৩ সালে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে নির্ধারিত সময়ে  উৎপাদনে যেতে পারে সে ব্যাপারে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। রাশিয়া সরকারের কাছ থেকে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসংবলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদনে যাচ্ছে এ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৬০ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য ২ হাজার ৪২৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও কেনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,  ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন  দেশের একমাত্র এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আর নির্মাণাধীন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিএস) নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে এ প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিককল্পে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক আইজিএর আওতায় রাশিয়ান ফেডারেশনের নির্বাচিত কোম্পানি ইলেরোন এ প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদনও দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আইজিএর আওতায় এ সংক্রান্ত একটি প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিএস) ও নির্মাণ কার্যক্রমে সহযোগিতা গ্রহণের জন্য সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাশিয়ার কাছে টেকনিক্যাল বিষয়ে এবং আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হয়। এরপর রাশিয়ার তিনটি প্রতিষ্ঠান— ইলেরোন, এনইপিটি এবং এনআইআরইটির দর প্রস্তাব পাওয়া যায়, যা পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে পাঠানো হয়। এসব প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইলেরোন থেকে প্রাপ্ত ডকুমেন্ট ও টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন সঠিক থাকায় এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় ইলেরোনকে নির্বাচনের জন্য কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়। ইলেরোনের প্রস্তাবিত দর ২ হাজার ৪২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকার ক্রয় প্রস্তাব, যা ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পেয়েছে।

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৬০ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এর পেছনে বার্ষিক খরচ হবে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা। 

এ ব্যাপারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের খবরকে জানান, দেশের একমাত্র পারমাণবিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্প একটি পরিকল্পিত ও অত্যাধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পটি বর্তমান সরকার গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলোর একটি। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের উৎপাদন কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে ২০২৩ সালে এ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসংবলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তির মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মযজ্ঞ ব্যাপক পরিসরে এগিয়ে চলছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হলে তা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জানা গেছে, ১৯৬১ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে পদ্মা নদীর উত্তর পাড়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরকে বেছে নেওয়া হয়। এ কার্যক্রমে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দুই ইউনিটের ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ২৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। চুক্তি অনুয়ায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রুশ সরকার। এ ছাড়া কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ এবং ব্যবহূত জ্বালানিও ফেরত নেবে তারা। নির্মাণ ব্যয়ের ১০ শতাংশ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার আর বাকি ৯০ শতাংশ ঋণ দেবে রাশিয়া। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জ্বালানি তেলের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।  এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎস্বল্পতা দূর হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যকম এ মেগা প্রকল্পে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের ৬ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল পর্ব বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ সুদহারে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার) ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের প্রকৌশল বিভাগ এটমস্ত্রয় এক্সপোর্ট (এএসই) জেনারেল কন্ট্রাক্টর হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। রুশ ডিজাইনের ৩+ প্রজন্মের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসংবলিত সব আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads