• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
চামড়াপণ্যে এগিয়ে আসছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে ঝুঁকছে নবীন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

ছবি : সংগৃহীত

উদ্যোক্তা

চামড়াপণ্যে এগিয়ে আসছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ এপ্রিল ২০১৯

দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে চামড়াজাত পণ্য তৈরির ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সংখ্যা। এদের দেখাদেখি আসছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তাও। সফলও হচ্ছেন তারা।

সফল উদ্যোক্তা নাজমা-মশিউরের মতো অনেক সফল উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তবে এ দুজনকে নিয়ে থাকছে বিস্তারিত। নাজমা চাকরি করার সময়ই মনস্থির করে নেন তিনি উদ্যোক্তা হবেন। এই লক্ষ্য সামনে রেখে যুব উন্নয়ন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তার স্বামী মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে একটি জুতার কারখানায় কাজ করতেন। তখনি নাজমা খাতুন একটি জুতার কারখানা খোলার পরিকল্পনা করেন। অর্থের অভাব ও কঠোর পরিশ্রমের বিষয়টি চিন্তা করে দ্বিমত পোষণ করেন তার স্বামী। তবে হাল ছাড়েননি নাজমা। স্বামীর সঙ্গে আরো কয়েক দফা কথা বলে ২০০৫ সালে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ভাড়া কক্ষে স্বপ্নের জুতার কারখানা শুরু করেন। দুই মেয়ের নামে কারখানার নাম রাখেন কুসুম-কলি সুজ ফ্যাক্টরি। এক মাসের মধ্যেই আরো পুঁঁজির দরকার হলে হতাশ হন তিনি। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চার লাখ টাকা ঋণ নেন। এগিয়ে এলেন মার্কেটিংয়ে অভিজ্ঞ স্বামী মিজানুর রহমান।

গুলিস্তান থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ছোট ছোট দোকানে স্যাম্পল দেখিয়ে অর্ডার আনা শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে তার ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। এবার দেশের বৃহত্তম পাইকারি জুতার মার্কেট ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেটের বড় দোকানগুলোতে পাইকারি সরবরাহ করে কুসুমকলি সুজ ফ্যাক্টরি। শুরু হয় বে-ইম্পেরিয়াম, জেনিস ও বাটার মতো বড় প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহ। ২০১২ সালে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ব্যবসার হিসাব দেখে ৪৫ লাখ টাকা ঋণ বরাদ্দ করে। ৬৫ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানটি গতিশীল হয়। ব্যবসা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন বড় এক বাধার মুখোমুখি হতে হয় নাজমা খাতুনকে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তার কারখানা। ক্ষতি হয় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

ব্যাংকে জমা থাকা ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা দিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানএই নারী উদ্যোক্তা। ২০১৩ সালে বাটার অর্ডার যথাযথভাবে সরবরাহ করে ওই বছর সব ক্ষতি পুষিয়ে কোম্পানি লাভ করে এক কোটি টাকা। কারখানার জন্য কেনেন এক খণ্ড জমি। বর্তমানে বাটা সুজ কোম্পানিতে প্রতিবছর কোটি টাকার পণ্য সরবরাহ করছেন নাজমা খাতুন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়ায় নিজের শোরুমে পণ্য বিক্রি করছেন। ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশেও পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে তার। বর্তমানে প্রায় ২০০ কর্মচারী কাজ করে তাদের কারখানায়। অন্যদিকে মশিউরের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পিস অ্যান্ড লেমন ক্রাফটসম্যানশিপ লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মশিউর রহমান। লোভনীয় চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন ২০১৫ সালে। সেবারই প্রতিষ্ঠিত তার প্রতিষ্ঠান থেকে চামড়াজাত পণ্য তৈরি করছেন তিনি।

ব্যবসার শুরুটা ছিল ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ করতে। মশিউর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই নিজের ব্যবসা করার স্বপ্ন ছিল আমার। সেই স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ নেয় ২০১৫ সালে। আমরা রপ্তানিযোগ্য চামড়াজাত পণ্য তৈরি করি।’ আগে বিক্রি অর্ডার, তার পর পণ্য তৈরি হয় মশিউর রহমানের প্রতিষ্ঠানে। এর ফলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। বলেন, ‘আমাদের পণ্য মানসম্মত হওয়ায় বিভিন্ন করপোরেট অফিস আমাদের আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখে। একবার আমাদের কাছ থেকে যারা পণ্য নেয় তারা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা হয়ে যায়। আমরা পণ্যের অর্ডার নেওয়ার পর পণ্য তৈরি করি। আগে সেল তারপর উৎপাদন করি। বর্তমানে আমাদের পণ্য আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়।’

এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) ফাউন্ডেশন তাকে ব্যবসায় অনেক সহায়তা করেছে বলে জানান মশিউর। ‘এসএমই ফাউন্ডেশন সব সময়ই উৎসাহ জোগায় আমাদের। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে লিমিটেড কোম্পানি হওয়া থেকে শুরু করে, সিটি করপোরেশনের কাগজপত্রসহ ব্যবসা করার প্রয়োজনীয় কাজ নেওয়া হয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কোথাও কাজ নিয়ে গেলে সহজেই সেটা হয়ে যায়।’

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে। আর সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় শতাধিক কর্মীর। প্রতিষ্ঠানটি লেদের জ্যাকেট ও জুতা ছাড়া প্রায় সব চামড়াজাত পণ্য তৈরি করছে। এর মধ্যে ব্যাগ, মানিব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, কার্ড হোল্ডার, বেল্ট, চাবির রিং ইত্যাদি রয়েছে।

ব্যবসার শুরুর পুঁঁজি সম্পর্কে মশিউর রহমান বলেন, ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে শুরু হলেও এখন দেড় কোটি টাকা ফ্যাক্টরিতে বিনিয়োগ রয়েছে তার। আর প্রতি মাসে বিক্রি এক কোটি টাকা।

এদিকে চলতি বছর এমএমই মেলায় চামড়াজাত পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছিল আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। যাদের মধ্যে টিম টেক্স বাংলাদেশ, কারিকা-বাংলাদেশ হস্তশিল্প সমবায় ফেডারেশন লি., জুট ক্র্যাফটস, পিস অ্যান্ড লেমন ক্রাফটম্যানশিপ লি., ক্লাইফার ফ্যাশন, এনেক্স বাংলাদেশ, রেনে বাংলাদেশ, স্যামু লেদার, স্মার্ট লেদার প্রডাক্টস, ডিজাইন বাই রুবিনা, শাবাব লেদার, কোজি লেদার লি., পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস, সুপার ফিড, কারিগর, ভার্সেটাইল লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল, লেদারিনা প্রাইভেট লি., লা মোড, কালুহাটি পাদুকা শিল্প মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড, ভাইপার, ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতি লি., থ্রি টেক মেলায় আগত দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads