• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
‘জামদানি গ্রাম’ পাখিমারা

বকশীগঞ্জে সঞ্জর জামদানি পল্লীতে কাজ করছেন জামদানি করিগররা

সংরক্ষিত ছবি

উদ্যোক্তা

‘জামদানি গ্রাম’ পাখিমারা

  • আবদুল লতিফ লায়ন, জামালপুর
  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০১৯

পরিশ্রমী সঞ্জু মিয়া ও তাহমিনার সফলতার কারণেই পাল্টে গেছে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাখিমারা গ্রামের নাম। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাখিমারা গ্রাম ‘জামদানি গ্রাম’ বা ‘জামদানি পল্লি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে পাখিমারার মানুষের অতীত পেশা।

জানা গেছে, বাবা হালিম সরকারের মৃত্যুর পর অভাবী সংসারে ভাতের অভাবে বিধবা মায়ের হাত ধরে এক সময় পাখিমারা গ্রাম ছেড়ে ঢাকার ডেমরায় গিয়ে ছিলেন কিশোর সঞ্জু মিয়া। ডেমরায় জামদানি পল্লিতে কারিগরের সহযোগী হিসেবে সামান্য বেতনে কাজ শুরু করেন তিনি। সফলতার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করতে থাকেন সঞ্জু। অল্প দিনেই হয়ে ওঠেন একজন দক্ষ জামদানি কারিগর। পরে স্বপ্ন পূরণের জন্য ঢাকার ডেমরা থেকে চাকরি ছেড়ে ২০০৪ সালে সঞ্জু মিয়া ছুটে আসেন পৈতৃক নিবাস পাখিমারা গ্রামে। কারিগর, সহযোগী, সুতা ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে মাত্র একটি তাঁত নিয়ে জামদানি তৈরির কাজ শুরু করেন সঞ্জু মিয়া। এরপর দক্ষ জামদানি কারিগর স্ত্রী তাহমিনা বেগমের সহযোগিতায় তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই জামদানি দম্পতি তাদের হাত আর পায়ের নিপুণতায় মনের মাধুরী মিশিয়ে বাহারি রঙের শাড়ি, বৈচিত্র্যময় ডিজাইন, নজরকাড়া কারুকাজ ও নতুনত্বের ছোঁয়ায় তৈরি করতে শুরু করেন মনোমুগ্ধকর জামদানি শাড়ি। মান ভালো থাকায় পাইকারি ও খুচরা উভয় শ্রেণির ক্রেতার সুনজরে পড়ে সঞ্জু-তাহমিনার তাঁতের তৈরি জামদানি শাড়ি। প্রসারিত হয় বাণ্যিজিক বাজার। শুধু দেশে নয়, দেশের মানচিত্র পেরিয়ে ভারতসহ বিদেশের বিভিন্ন বাজারেও কদর বেড়ে যায় সঞ্জু-তাহমিনার জামদানি। দেশে বিদেশে বেড়ে যায় তাদের তৈরি জামদানির চাহিদা। চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে ব্যবসার প্রসারও ঘটাতে বাধ্য হন সঞ্জু মিয়া। এরই মধ্যে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতারাও শাড়ি কিনতে ভিড় করছেন পাখিমারা তাঁতপল্লিতে।

স্বামী-স্ত্রী মিলে মাত্র একটি তাঁত দিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমান চিত্র ভিন্ন। সঞ্জু-তাহমিনার জামদানি কারখানায় এখন তাঁতের সংখ্যা ২০টি। বর্তমানে ৫০ শ্রমিক তার অধীনে জামদানি তৈরির কাজ করছেন। ৫০ শ্রমিককে তিনি প্রতি মাসে বেতন দেন প্রায় তিন লাখ টাকা। প্রতি মাসে কারখানায় তৈরি হয় শতাধিক শাড়ি। প্রতিটি শাড়ির দাম ৭ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। তবে অর্ডার পেলে এর চেয়েও বেশি দামের শাড়ি তৈরি হয় সঞ্জুর জামদানি কারখানায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পাখিমারা গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা ছিল দিনমজুরি আর বাঁশ শিল্প। সেই পাখিমারা গ্রাম এখন তাঁতের  খটখট শব্দে কর্মমুখর থাকে সবসময়। সঞ্জু ও তাহমিনার তাঁতে কাজ শিখে শতাধিক জামদানি তাঁত গড়ে উঠেছে পাখিমারা গ্রামে। ৩ শতাধিক মানুষ বেকারের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। সঞ্জু ও তাহমিনার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে একই গ্রামের আনারুল ইসলাম, খোকা মিয়া, সবুজ মিয়া, রমজান আলী, মমিন মিয়া ও শিপন মিয়াসহ বিভিন্ন জনে শতাধিক তাঁত প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিটি তাঁতেই তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের জামদানি শাড়ি। সবার ব্যবসাও জমজমাট।

পাখিমারার জামদানি পল্লির জনক সঞ্জু মিয়া জানান, সততা এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে একাগ্র থাকার কারণে আমি সফল হয়েছি। আমার পরিবারের কষ্ট দূর হয়েছে। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব সুখে আছি।

সঞ্জু মিয়ার স্ত্রী তাহমিনা বেগম জানান, এক সময় পুঁজির জন্য বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও’র এর কাছে ধরনা দিতাম। কিন্তু এখন বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও ঋণ দেওয়ার জন্য  আমাদের পেছনে ঘোরে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হলে শুধু আমাদের না এই গ্রামের প্রতিটি পরিবারের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে।

বকশীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর জানান, এই জামদানি পল্লি নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। ঐতিহ্যবাহী এ জামদানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহযোগিতার প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা পেলে জামদানি শিল্পের প্রসার হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads