• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ইয়েমেন সঙ্কটের শেষ কোথায়

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

ইয়েমেন সঙ্কটের শেষ কোথায়

  • হিমেল আহমেদ
  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০১৮

বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো ইয়েমেন সঙ্কট, যেখানে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে শিশু-নারীসহ নির্দোষ মানুষকে। আর বিশ্ব ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখছে বেসামরিক মানুষ ও নিষ্পাপ শিশু হত্যার দৃশ্য। মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবল গৃহযুদ্ধ ও সৌদি আগ্রাসন ইয়েমেনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগ বলছে, আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্র ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার ফলে ৮৪ লাখ মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। মাত্র দুই কোটি জনসংখ্যার ইয়েমেনে তীব্র খাদ্য সঙ্কট নতুন করে সঙ্কটে ফেলেছে দেশটিকে। সঠিক সময়ে খাদ্যের জোগান দেওয়া না গেলে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ না খেয়েই মারা যাবে।

আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ এই ইয়েমেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদির বিভিন্ন মতবিরোধ দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার আশু সমাধান জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইয়েমেনে এখন মোট ৫২ লাখ শিশু দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন বলে জানিয়েছে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা সেভ দ্যা চিলড্রেন। লাখ লাখ শিশু জানে না পরবর্তী খাবারটি কখন পাবে অথবা আদৌ পাবে কি-না। জরুরিভিত্তিতে এসব শিশুর নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করা না গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। সেভ দ্যা চিলড্রেনসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা শিশুদের চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করলেও ত্রাণ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করায় সময়মতো পৌঁছানো যাচ্ছে না বলে এসব শিশুর জীবন চরম সঙ্কটে পড়েছে। এ বছর শেষ হওয়ার আগেই ৩৬ লাখেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সেভ দ্যা চিলড্রেন।

জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ইয়েমেনের যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার লোক নিহত হয়েছে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশ বেসামরিক আর আহত হয়েছে আরো ৫৫ হাজার। আহত বেশিরভাগই নারী ও শিশু; যাদের নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা, বাসস্থান ও খাদ্য। সম্প্রতি সৌদি সরকারের যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে নতুন করে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সৌদি জোটের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ইয়েমেনের পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে দেশটির মানুষ, যাকে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ বলে আখ্যা দিচ্ছেন অনেকেই। এমন অবস্থায় এত সংখ্যক বেসামরিক মানুষকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। যুদ্ধ বন্ধ করে ইয়েমেনের বেসামরিক মানুষ ও শিশুদের বাঁচাতে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তিন বছর আগে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী ‘সানা’সহ ইয়েমেনের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে নিলে যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সমর্থিত সৌদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশটির সরকারের পক্ষাবলম্বন করে হুথিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এ পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সৃষ্টি হতে যাচ্ছে মহা দুর্ভিক্ষ। ইয়েমেনে যুদ্ধের ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং মুদ্রার দরপতন হওয়ায় অনেক পরিবার খাদ্যের জোগান দিতে পারছে না। সবচেয়ে বড় কারণ হলো, দেশটির বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে সাহায্য আসার এবং পণ্য চলাচল করার মূল বন্দর হোদাইদাতে চলছে যুদ্ধ। ফলে সে বন্দর দিয়ে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না দেশটিতে। তাই দুর্ভিক্ষ ঝড়ের বেগে হানা দিচ্ছে ইয়েমেনে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী ইয়েমেন এখন শিশুদের জন্য জাহান্নামে পরিণত হয়েছে। দেশটির এক কোটি ১০ লাখ শিশু চরম খাদ্য সঙ্কট ও নানা ধরনের অসুখে ভুগছে। এদের অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে নিজ দেশেই শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। এদের পুনর্বাসন করা না গেলে দেশটি একটি প্রজন্ম হারিয়ে ফেলবে। যুদ্ধের নামে শিশু ও বেসামরিক মানুষ হত্যার নগ্ণ খেলা বন্ধ করা উচিত। আধুনিক বিশ্বের এই সময়ে এসেও মানবজাতি ইয়েমেনে চরম দুর্ভিক্ষ অবলোকন করছে যা সত্যিই লজ্জাজনক। অচিরেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে দুর্ভিক্ষের কবল থেকে নিরীহ শিশু ও মানুষকে উদ্ধার করা উচিত। মানবতা রক্ষায় বিশ্বনেতাদের এক টেবিলে বসা এখন সময়ের দাবি। ইয়েমেন সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘ, বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর নীরবতা কাম্য নয়। বিশ্বের সব মুসলিম রাষ্ট্রের ইয়েমেন সঙ্কটের সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads