• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
অশনিসংকেত : আসামের নাগরিকত্ব সঙ্কট

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

অশনিসংকেত : আসামের নাগরিকত্ব সঙ্কট

  • প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জাতীয় নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া থেকে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ার পর তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে নানান মহল থেকে। এটি ভারতের এমন একটি রাজ্য, যেখানে বসবাস করে বহু জাতির মানুষ। এসব অধিবাসীর মধ্যে রয়েছে বাঙালি, অসমীয়া-ভাষী হিন্দু এবং বহু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সঙ্কর। আসামের মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ। তার এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পর এই রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বসবাস। আসামে নাগরিক তালিকা বা এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে চল্লিশ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ল, তারা স্বাধীন ভারতে এখন কীভাবে থাকবেন, তার কোনো সন্তোষজনক স্পষ্ট উত্তর নেই। তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ফলে, যাদের অনেকেই বহু বছর ধরে আসামে বসবাস করছেন, হঠাৎ করেই তারা তাদের ভোটাধিকার হারালেন।

এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে যে, এখন তারা তাদের জমিজমা ও বাড়িঘরও হারাতে পারেন। যাদের জমিজমা কিংবা বাড়িঘর আছে, তারা হয়তো প্রতিবেশীদের হামলার শিকারও হতে পারেন। বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) খসড়া তালিকা প্রকাশে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ হয়ে গেল অবৈধ বিদেশি। এ তালিকা থেকে বাদ পড়ায় এখন যারা অবৈধ বিদেশি হয়ে পড়ল, তাদের বেশিরভাগই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আসামের ৩৩ জেলার মধ্যে ১৫টি জেলায় তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। এর ফলে ভারত এখন নতুন একদল রাষ্ট্রহীন মানুষ তৈরি করল, নিজের দেশের ভেতরেই জন্ম দিল আরেক সঙ্কটের। এটা হয়ে দাঁড়াল মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মতো ঘটনা।

স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, এই নাগরিকত্ব সঙ্কটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়াবে? বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত, যাতে আরেকটি রোহিঙ্গা ইস্যু সৃষ্টি না হয়। আসাম রাজ্য এখন শাসন করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তার দল থেকে অতীতেও ঘোষণা করা হয়েছে যে, অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের এই রাজ্য থেকে বের করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই ৪০ লাখ মানুষ রাতারাতি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ এখন সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজমান এবং তালিকায় নাম না থাকা অনেকেই মনে করছেন- ‘অবৈধ’ হওয়ার কারণে তাদের যে কোনো সময় আসাম তথা ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে। এমন ভাবনা স্বাভাবিক। মানুষের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। খসড়া নাগরিকত্ব নিবন্ধন প্রকাশের পর বিজেপির অনেক নেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, এমনকি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলতে বাংলাদেশিদেরই বোঝানো হচ্ছিল।

বাংলাদেশের জন্য আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, আসামের এই সম্ভাব্য রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ সমাধান কী হবে— এই প্রশ্নে ভারতের বিভিন্ন ফোরামে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিই আলোচিত হচ্ছে। ভারতের উচ্চ আদালতসহ বিভিন্ন জাতীয় ফোরামে যেভাবে বারবার আসামে এই অবৈধ অভিবাসীদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সরকার এই ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করে দেখতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বার্তা দেওয়া যেতেই পারে। যখন সারা বিশ্বের প্রায় দশ কোটি রাষ্ট্রহীন মানুষের সঙ্কটের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন ভারতের আসামে নতুন করে এই ৪০ লাখ মানুষের রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর। এ সমস্যাটি যাতে আঞ্চলিক শান্তি ও সুরক্ষায় ভবিষ্যতে কোনো সঙ্কট তৈরি না করে এবং ভারত সরকার তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে নাগরিকত্বের এই বিতর্কের সমাধান করবে- এমনটাই কাম্য।

 

মুনযির আকলাম

লেখক : প্রাবন্ধিক

moonzeerahcklham@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads