• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ট্যাব ও ফোনের স্ক্রিন থেকে শিশুদের দূরে রাখুন

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

ট্যাব ও ফোনের স্ক্রিন থেকে শিশুদের দূরে রাখুন

  • শতাব্দী জুবায়ের
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

এখন শহরের প্রায় শিশুদের নাকের ডগায় ঝুলে থাকে চশমা। মাঝে মাঝে আশ্চর্য হই। এত অল্প বয়স, ওদের চোখে চশমা কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমার এক সদ্য পাস করা ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বললাম। সে জানালো বিস্তারিত। তার বক্তব্য, এখন বাবা-মায়েরা শিশুদের যাচ্ছেতাই ভাবে নিজের মোবাইল ব্যবহার করতে দেন অথবা বিনোদনের জন্য কিনে দেন ট্যাব, যে তার অবসর কিংবা পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে নানা ধরনের গেম খেলে। সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে মোবাইল বা ট্যাবের স্ক্রিনের দিকে। ফলে সে দূরের অথবা কাছের বস্তু ঝাপসা দেখে অথবা দেখতে পায় না স্পষ্টভাবে। এই রোগকে বলা হয় চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি সমস্যা। এই রোগের কারণে ক্লাসের পেছনে বসলে সামনের বোর্ড স্পষ্ট দেখতে পায় না শিশুরা। বিশেষজ্ঞরা আরো  বলছেন, শিশুদের চোখে অতিরিক্ত স্ক্রিন অ্যাক্টিভিটি বড়দের চোখের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করে। কারণ তাদের চোখ এখনো পরিপক্ব হয়ে ওঠেনি। কোমল চোখে স্ক্রিনের আলো পড়লে সেটা সহজেই চোখকে আক্রান্ত করতে পারে।

চিকিৎসক বলেছেন, দিনের বেশিরভাগ সময় স্মার্টফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখার কারণে ক্ষীণ দৃষ্টিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। ফোনে ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে, গেমস খেলে চোখের পলক না ফেলে বিরামহীনভাবে। ফলে এই দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, এক দশক আগেও ৮ থেকে ১০ বছরের শিশুদের এমন অবস্থা দেখা না গেলেও, বর্তমানে স্মার্টফোন আর ট্যাবের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের শিশুদের ভালোভাবে রাখতে চাই। যেহেতু ভালো রাখতে চাই তাই স্মার্ট ফোন, ট্যাব থেকে দূরে রাখতে হবে তাদের। যদি বেশি ভালোবেসে, আদর-আহ্লাদ করে তাদের হাতে লাগামহীনভাবে এসব যন্ত্র দিয়ে দেন, তাহলে চোখ নষ্ট হবে আপনার সন্তানেরই। তাই এ বিষয়ে সবসময় সজাগ থাকা জরুরি বাবা-মা তথা অভিভাবকদের।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুদের চোখে এই সমস্যা বেশি। এর কারণ অতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহার করা। দীর্ঘ সময় চোখ স্ক্রিনে রাখার ফলে স্ক্রিন থেকে আসা রশ্মি শিশুদের চোখের ক্ষতি করছে এবং চোখ স্থির হয়ে থাকার কারণে চোখ শুকনো হয়ে যায়, ফলে চোখের বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়।

আরেকটি ব্যাপার প্রায়ই লক্ষ করা যায়, সেটা হচ্ছে শিশুরা স্মার্ট ফোনের প্রতি আসক্ত হওয়ার কারণে পড়াশোনায় মন বসে না। তাই শিশুর মনোযোগ ঠিক রাখতে এসব থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন। শিশুদের যে সময় দূরের দৃষ্টি তৈরি হওয়ার কথা, সে সময়ই তারা মোবাইল ফোনের কিংবা ট্যাবের স্ক্রিনে দৃষ্টিকে আটকে রাখছে। যে কারণে দূরের দৃষ্টি প্রসারিত হতে পারছে না। ফলে তাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়ছে না। এসব বিষয় থেকে উত্তরণের জন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। শিশু যদি টিভির সামনে গিয়ে টিভি দেখে, বোর্ডের লেখা ঝাপসা দেখে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।  

এখন শহরে প্রধান যে সমস্যা, তা হলো শিশুদের খেলার জায়গা নেই। তারা কলোনির রাস্তায় খেলে। আবদ্ধ থাকে চার দেয়ালের মাঝে। ঘরে বসে বসে তারা ট্যাব, মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপের স্ক্রিনে আসক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে শিশুদের বাঁচাতে তাদের রোদে মাঠে খেলতে দিন এবং ট্যাব মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখুন। শিশুরা টেকনোলজি অবশ্যই ব্যবহার করবে তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়। এমনভাবে ব্যবহার করবে যাতে তার কোনো ক্ষতি না হয়। এজন্য অভিভাবকদের সজাগ থাকতে হবে। কেননা সন্তান আপনাদের। তাদের কীভাবে তৈরি করবেন, সেটা দেখার দায়িত্ব আপনারই।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads