• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সাংবাদিক কেন রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

সাংবাদিক কেন রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০১৯

বর্তমানে সাংবাদিকদের বৃহৎ একটি অংশ রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক। এটি আমি অভিযোগ করে বলছি না, এটিই এখন বাস্তবতা বলে পরিগণিত! রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা সাংবাদিকদের একটি খারাপ দিক। তাদের কর্মের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক নেতাদের সাফাই গাওয়া নয়। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তাই তাদের কাজ রাজনৈতিক নেতাদের সমাজের অসঙ্গতিগুলো দেখিয়ে দেওয়া। কিন্তু কিছু সাংবাদিক তা না করে নেতা সম্পৃক্ত হয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। সাংবাদিকরাই যদি দেশের জনমতকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে সাধারণ জনগণ কোথায় গিয়ে তাদের অধিকারের কথা বলবে? কোথায় গিয়ে তারা অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে?

সাংবাদিকতাকে টিকিয়ে রাখতে রাজনীতির ছত্রছায়ার দরকার হয় না, স্বচ্ছ সাংবাদিকতাই যথেষ্ট। বর্তমানে ফেসবুকের বদৌলতে সাংবাদিকরা রাজনৈতিক নেতাদের গুণগান প্রচারে একটু বেশিই মত্ত। বিশেষ করে জাতীয় থেকে আঞ্চলিক— যে কোনো ধরনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। জনগণ নেতার চেয়ে সাংবাদিকদের বেশি বিশ্বাস করে। যখন সাংবাদিকরা একজন অযোগ্য নেতাকে সমর্থন করেন, সাধারণ জনগণ সেদিকে ঝোঁকে। এসব সাংবাদিক তাদের চরিত্র ও পেশাকে কলুষিত করে অযোগ্যদের সমর্থন দিয়ে নির্বাচনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করে তোলেন।

প্রশ্ন হলো, সাংবাদিক হয়ে রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ নেওয়ার দরকার কী? সে ক্ষমতাসীন হোক আর বিরোধীই হোক, যোগ্য হোক আর অযোগ্যই হোক না কেন। সাংবাদিকের উচিত ধর্মনিরপেক্ষ থাকা। সাংবাদিকের কাজ সত্য ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রচার করা। কিন্তু এ-জাতীয় সাংবাদিকদের কারণে সারা দেশে সাংবাদিকদের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে; যেমনটা কমে গেছে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর, পুলিশ-প্রশাসনের ওপর। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতারা একই পথে হাঁটলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের পাশাপাশি তথ্য অধিকার চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

আমি মনে করি, যেসব সাংবাদিক তাদের চরিত্র ও পেশাকে কলুষিত করে ভুল রাজনৈতিক মতাদর্শকে উপস্থাপন করেন, পছন্দের দলের পক্ষে সাফাই গান, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন— তাদের সংবাদ সংস্থা কর্তৃক অব্যাহতি দেওয়া আবশ্যক। তাদের রাজনীতির খাতায় নাম লেখানোর সুযোগ দেওয়া হোক। সাংবাদিক মানসে রাজনীতির ভূত চেপে বসলে তাকে সাংবাদিকতা করা বোঝায় না। কিছু হলুদ সাংবাদিকতার কারণে জনগণ  প্রকৃত তথ্য থেকে বঞ্চিত, বিভ্রান্তির শিকার। রাজনৈতিক পরিশীলতার পাশাপাশি বিপথগামী সাংবাদিকদেরও নিরসন করা দরকার।

রাজনৈতিক নেতারা রাতের আঁধারে দল পরিবর্তন করতে পারেন। দুদিন আগে স্টেজে বক্তব্য দিয়ে গোষ্ঠী উদ্ধার করতে পারা নেতাটি দুদিন পরে মধুর সুরে সাফাই গাইতে পারেন। কিন্তু জনগণ এসব করতে পারে না। তাদের একটা নীতি-নৈতিকতা আছে। তবে অপ-রাজনীতির শিকার কিছু সাংবাদিক আজ চরমভাবে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় নিমগ্ন। অনেক সাংবাদিক মিডিয়ায় নিউজ কাভারেজের জন্য সাংবাদিকতা করে না, রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তি প্রচারণার জন্য সাংবাদিকতা করে বলে আমার মনে হয়। সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ধোয়া তুলসীপাতা বানিয়ে টাকার পাহাড় গড়ে। স্বার্থ ফুরালে টিস্যুর মতো তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এই কি সাংবাদিকতা পেশার মূল লক্ষ্য?

সাংবাদিকদের মনে রাখা উচিত, ব্যক্তিস্বার্থের তাগিদে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা সাংবাদিকদের কাজ নয়। সাংবাদিকদের এটাও মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও সাংবাদিকদের জন্য নয়। এতে জনগণের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে যায়। জনগণ বিভ্রান্ত হয়। সুশাসন থেকে সাধারণ জনগণ বঞ্চিত হয়। জনগণের আস্থা অর্জনে সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা বাঞ্ছনীয়। প্রকৃত সাংবাদিক দেশ ও সমাজের উন্নয়নের অংশীদার।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads