• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
প্রজন্মের হাতে সমর্পিত হোক স্বাধীনতার মর্যাদা

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

প্রজন্মের হাতে সমর্পিত হোক স্বাধীনতার মর্যাদা

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০১৯

আমরা বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবু আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বাসী, আত্মপ্রত্যয়ী এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট। প্রতি বছর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস আসে, আমরা উপলব্ধি করি ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশকে পাক হানাদারমুক্ত করতে বাংলার আপামর জনগণ দৃঢ় মনোবল নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের ছিল না সুসজ্জিত গাড়িবহর, ছিল না শক্তিশালী অস্ত্র। কোন বলে তারা যুদ্ধক্ষেত্রকে ‘কোমল বাগান’ ভেবে জীবন-মরণ বাজি ধরল, এসব তরুণ প্রজন্মকে নিদারুণ ভাবায়। আবার ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। তরুণ প্রজন্ম আবারো আবেগপ্রবণ হয়। বাংলার মুক্তিকামী মানুষ সংগ্রামের প্রগাঢ়তার বিষয়বস্তু উপলব্ধি করে। যেখানে পাকস্তানিরা বোমা-বারুদ জ্বালিয়েছে, সেখানে বাঙালিরা কীভাবে সেসব মোকাবেলা করেছে? নিশ্চিত দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসাই তাদের শত্রু মোকাবেলায় উৎসাহ জুগিয়েছে।

কিন্তু আজ এই তরুণ প্রজন্মের সোজাসাপ্টা প্রশ্ন, আমরা যদি ১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে থাকি, তবে আজকের বাংলাদেশ এত পশ্চাৎপদ কেন? স্বাধীনতা অর্জনের এতটা বছর পরও কি সোজা হয়ে আমরা দাঁড়াতে শিখিনি? একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ আর আগের অবস্থানে নেই। সার্বিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে দেশ এখনো চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। শিক্ষা খাতে অনিয়ম, চিকিৎসা খাতে নৈরাজ্য, খাদ্যে ভেজাল, পরিবহন খাতে স্বেচ্ছারিতা, নারীদের অনিরাপত্তা, পরিবেশ বিপর্যয়, চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু বিষয় যেন আমাদের পরাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করতে বাধ্য করছে। এসব দৃশ্যমান অস্থিরতা প্রমাণ দেয় দেশ যেন এক অনিয়মের বেড়াজালে বন্দি।

আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় প্রগাঢ়ভাবে ধরা দেয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কি আজ ব্যক্তিবিশেষের হাতে বন্দি? রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে স্বাধীনতা কি দ্বিখণ্ডিত? ১৯৭১ সালে শুধু একশ্রেণির মানুষের সুবিধা ভোগের জন্য স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব বাঙালির মুক্তির জন্য দ্ব্যর্থকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তাই আমরা তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছি, বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক, যার কাছে মানুষের বাঁচার অধিকার ছিল মোক্ষম। তার দৃষ্টিতে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন তার ভাই, আপনজন। অথচ বর্তমান সময়ে এসে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শকে অনুসরণের নাম করে একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা অপরিমিত ফায়দা লুটছেন। তাই আমরা বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম যে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বাধীনতার বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে বিষয়টি তরুণ প্রজন্মের চোখে বাধছে, তা হলো মুক্তিযুদ্ধের সনদ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করা। রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তিযুদ্ধ না করেও ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’ অর্জন করছে। তাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ণয় করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূলকরণে সরকারকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান রইল।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের দেশ ক্রমেই উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে বিশেষভাবে সাফল্যমণ্ডিত। আকাশে আজ আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি আরো বেগবান হবে। তবে বর্তমান সরকারকে দুটি বিশেষ বিষয়ের ওপর এখনই সুনজর দিতে হবে। প্রথমত যে কোনো মূল্যে স্বাধীনতার মর্যাদা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে উপযোগী কর্মসংস্থানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads