• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রাফি ইস্যুও কি ভুলে যাব

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

রাফি ইস্যুও কি ভুলে যাব

  • আজহার মাহমুদ
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০১৯

নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা চলছেই। কিন্তু তারপরও কি তারা তাদের সম্মান পাচ্ছে? বরং বেড়ে চলেছে ধর্ষণ। মুহূর্তে একটি মেয়ের সুন্দর জীবন হচ্ছে ধ্বংস। একজন ধর্ষকের অনৈতিক কাজের জন্য একটি মেয়ের জীবনে নেমে আসে অপরিসীম দুর্ভোগ। অনেকেই আত্মহত্যার শরণাপন্ন হন, কেউ আবার ধর্ষকের হাতেই খুন হন। ধর্ষিতা এবং তার পরিবারে নেমে আসে অভিশাপের কালো ছায়া। ওদিকে ধর্ষণকারী যেন এক মহান কাজ শেষ করে হেঁটে বেড়ান সমাজের নাকের ডগায়। বিচার চাইতে গেলে ধর্ষককে কিছু না বলে উল্টো মেয়ের ঘাড়েই দোষ চাপানো হয়। অভিযোগ তোলা হয়, মেয়ে পর্দা করে না, মেয়ের চলা ভালো না, মেয়ে উগ্র স্বভাবের, মেয়ে যার তার সঙ্গে কথা বলে ইত্যাদি ইত্যাদি।

এসব মেনে নিয়ে আমরা দিব্যি আছি! কিছুদিন আলোচনায় সরগরম থাকলেও ধীরে ধীরে তা হালের হাওয়ায় হারিয়ে যায়। বিচার আর হয় না। তাই ধর্ষণ দেশের মাটিতে শেকড় গেড়ে বসে। ধর্ষক পেয়ে যায় প্রশ্রয়। দেশ হয়ে যায় ধর্ষণের অভয়ারণ্য।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আর কত মেয়েরা নিজেকে এভাবে বলি দেবে? আর কতকাল এসব নরপশু ধর্ষণ করার পরও সমাজে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াবে? কোনো উত্তর আছে আপনার কাছে? জানি থাকবে না। আমি পোশাকের কোনো দোষ দিব না। পোশাকের দোষ দিলে সাম্প্রতিক ঘটনাটির কী ব্যাখ্যা দেবেন? যে মেয়ে মাদরাসায় পড়াশোনা করে, পর্দা করে চলে তার কী দোষ? আমরা তো আবার দোষ খুঁজে বের করি। এখন হয়তো বলতে পারেন মেয়েটা তো প্রেম করে। তার মানে তাকে ধর্ষণ করা যাবে!

প্রেম মানে শরীর দেওয়া-নেওয়া নয়। কিন্তু ওই ধর্ষক শিক্ষকও মনে করেছেন প্রেম মানে শরীর দেওয়া-নেওয়া। তাই সে তার মেয়ের সমতুল্য ছাত্রীকে এমন প্রস্তাব দেয়। কারণ প্রেম মানে তো একজন ধর্ষক বুঝবে না। ধর্ষক চেনে শরীর। তাই সেও রাফির শরীরটা চেয়েছে। আপনি যদি ধর্ষকদের সামনে বোরকা পরেও যান, তারা ধর্ষণ করবেই। তাই মানে এই নয় যে আমি বোরকা খুলে রাস্তায় হাঁটতে বলছি। যার যার রুচি অনুযায়ী সে পোশাক পরবে, এখানে আমার আপনার হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। এজন্য প্রয়োজন সুন্দর মানসিকতা এবং পারিবারিক শিক্ষা। আপনি ঠিক থাকলে সব ঠিক। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আপনার মন চাইলে আপনিও রাস্তায় কাপড় ছাড়া হাঁটুন, আর দেখুন মেয়েরা আপনার কাছে আসে কি-না! আপনি কেন তাদের পেছনে যান। কিছুদিন আগে প্রতিবাদের সুরে জামায় লেখা ছিল, ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’। প্রতিবাদটা যথাযথ হলেও প্রতিকার পাওয়াটা অনেকটা আকাশ কুসুমের মতো।

কিন্তু এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি। যতদিন আমাদের মাঝে বিচারহীনতা থাকবে ততদিন এ সমস্যার সমাধান হবে না। দূর করতে হবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আসামিদের শাস্তি দিতে হবে ভয়ানকভাবে এবং দৃষ্টান্তমূলক, যাতে আর কোনো পশু এ ধরনের কাজ করতে না পারে। কিন্তু এদেশে তো শাস্তি নেই, তাই ধর্ষকদের শাস্তির ভয়ও নেই। ভাবতে অবাক লাগে, যে দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী, সে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা হওয়া সত্যিই বেদনাময়। রাফি বলেছিল, তার সঙ্গে যারা অন্যায় করেছে তাদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবে। কিন্তু তার আগেই মৃত্যুর কাছে সে হেরে গেল। আজ রাফি একজন না থাকলেও হাজার রাফি তার হয়ে প্রতিবাদ করছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। রাফি মারা গিয়েও দেখিয়ে গেছে কীভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। শুধু একটাই ভয়, বিচার হবে তো! নাকি অন্যদের মতো তাকেও ক’দিন পরে ভুলে যাব!

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads