• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ব্যাংকঋণ বনাম ঋণখেলাপি

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

ব্যাংকঋণ বনাম ঋণখেলাপি

  • প্রকাশিত ২৮ এপ্রিল ২০১৯

মো. রাশেদ আহমেদ

 

প্রতিদিন খবরের কাগজে প্রকাশ হচ্ছে ব্যাংকের ঋণখেলাপির নতুন নতুন তথ্য। সাধারণ অর্থে, কোনো কারণে চুক্তিশর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর যখন কোনো ঋণের কিস্তি ফেরত না পাওয়া যায়, তখন তাকে ঋণখেলাপি বলা হয়। পারিবারিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রায় সব ধরনের আর্থিক লেনদেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, একটি দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বাড়ানো, নতুন নতুন শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার পেছনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ব্যাংকিং খাত।

বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছাড়াও তফসিলি ব্যাংক ৫৭টি। আবার নতুন করে তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে কম-বেশি সব রাষ্ট্রায়ত্ত ও তফসিলি ব্যাংক ঋণখেলাপির জালে বন্দি। ঋণখেলাপির ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়; কিন্তু তার পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে তা হবে ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় অশনিসংকেত। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা এবং একই সময়ে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা; এর মধ্যে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ খেলাপি ঋণ। ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। অথচ ২০০৯ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে ঋণখেলাপি। বর্তমান পাঁচটি ব্যাংকের যে ঋণ খেলাপি আছে, তা মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক। রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপির পেছনে অগণিত কারণ বিদ্যমান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব, লালফিতার দৌরাত্ম্য, সুশাসন, জবাবদিহিতার অভাব, বেনামি ঋণ ও স্বেচ্ছারিতা। ঋণখেলাপির জন্য দিন দিন ব্যাংকের ওপর আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ গ্রাহকরা। একদিকে যেমন ডিপোজিটররা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; অন্যদিকে তাদের মূলধন ফিরে পাওয়া নিয়ে থাকে সংশয়। এখানেই শেষ নয়, খেলাপির বিশাল পরিমাণ অর্থ থেকে ব্যাংক যেমন আয় করতে পারছে না, ঠিক তেমনি অনাদায়ী হওয়ার কারণে বাড়ছে না বিনিয়োগের পরিমাণ। ফলে কমছে ব্যাংকের আয়, কমছে বিনিয়োগ, থমকে যাচ্ছে ব্যাংক খাতে আর্থিক গতিশীলতা। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল খাত হিসেবে ব্যাংকিং খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও আজো তা খুব বেশি আলোর পথ দেখেনি। বরং ফল হয়েছে উল্টো। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রথমে দুর্নীতি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত বর্তমান আইন সংশোধন করে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। তৃতীয়ত ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাসহ রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে হবে। চতুর্থত জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া ঋণখেলাপি কমানোর জন্য ব্যবস্থাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক নিয়োগে অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতি সম্পর্কে জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে খেলাপি ঋণ কমানোর বিকল্প কোনো পথ নেই।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads