• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
জাহালম থেকে বাদল ফরাজী

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

জাহালম থেকে বাদল ফরাজী

  • মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০১৯

জাহালম মুক্তি পেয়েছিলেন জেল খাটার তিন বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র মাত্র দুদিন আগে। তার অপরাধ মূল অপরাধী আবু সালেকের সঙ্গে তার চেহারার সামান্য মিল। আর এই অপরাধে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) ৩৩ মামলার আসামি হয়ে যান জাহালম নামের নিরীহ, নিরপরাধ, দিনমজুর। অসহায় পরিবারটির কত কষ্ট করেই না মামলা চালাতে হয়েছে, তা জাহালমের মতো গরিব লোকজনের পরিবার ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। মানবাধিকার কমিশনের সহায়তায় এবং ভাগ্যের জোরে হয়তো বেঁচে গেছেন। নইলে আরো কত বছর জেলে কাটাতে হতো, কে জানে?

মারামারির মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এহসান হাবিব সুমন। তাকে তার ক্যাম্পাসে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ঘটিত যে অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি সেদিন ক্যাম্পাসেই ছিলেন না, যা তার কারাগার থেকে লেখা চিঠিতে আমরা জানতে পারি। তার প্রেরিত চিঠিতে আরো অনেক তথ্য পাওয়া যায়, যেখানে তিনি জাহালমের মতো বারবার বলেছিলেন তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে? তার অপরাধ কী? তিনি তো রাজনীতি করেন না এবং ওই সময়ে ক্যাম্পাসেও ছিলেন না। তবু তাকে মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য তদন্ত করার কথা বলে কোর্টে চালান দেওয়া হয়। অবশেষে ১৩ দিন পর তার ওই চিঠির মাধ্যমে মুক্তি লাভ করেন। মেধাবী হওয়ায় হয়তো চিঠিটি লেখার চিন্তা এসেছিল তার মাথায় এবং তার তথ্যের সত্যতার ভিত্তিতে আইন তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু আদৌ কি মুক্তি পেয়েছে ছেলেটি? কারণ সরকারি তালিকায় যার নাম অপরাধী হিসেবে লিখিত?

তিন বছর কিংবা ১৩ দিন নয়, দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে জেলে রয়েছেন বাদল ফরাজী। অপরাধ তার পর্যটক হওয়া, ভ্রমণপিপাসু হওয়া, তাজমহল দেখতে যাওয়া। আর এই কি দারুণ অপরাধে ১০ বছর জেল খেটেছেন দিল্লির তিহার জেলে। তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে তার এ জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনা হয়। অথচ এখানে এসেও প্রায় ১ বছর ধরে থাকতে হচ্ছে তাকে জেলে। মেলেনি এখনো মুক্তি। কবে মিলতে পারে তারও কিছু অগ্রগতি হচ্ছে না। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। তারপর আর আমরা কোনো মিডিয়ায় কোনো তথ্য পাইনি। ১৮ বছর বয়সে এই ছেলেটি তাজমহল দেখতে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন ভারতের নয়াদিল্লিতে ২০০৮ সালের ৬ মে ঘটিত একটি হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২ মাস পরে ১৩ জুলাই প্রবেশের পরও আসামি হয়ে গেলেন বাদল ফরাজী। পরে নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ভারতের জেল থেকে মুক্তি মিললেও এখন বাংলাদেশের জেলে কাটাতে হচ্ছে তাকে। যে ছেলেটির জীবন-যৌবন প্রায় জেলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে এভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও বিষয়টি ভাবা যায়! তার পরিবারও কত যাতনা সহ্য করছেন ছেলেকে বা ভাইকে জেলে রেখে তাও এক দুই বছর নয়, দীর্ঘ ১১ বছর।

হাইকোর্ট কবে এ ছেলেটির খোঁজ নেবেন? তার পাশে দাঁড়াবেন? জাহালম ও এহসান মুক্তি পেলেও জাহালমদের-এহসানদের-বাদল ফরাজীদের মুক্তির ব্যবস্থ করে দেবেন! কারাপ্রকোষ্ঠে ধ্বংস হয়ে যাবে কি তার জীবন নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও! দ্রুত তাকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন। তার পরিবারের এ দীর্ঘ অসহায়ত্বের কথাও একটু ভাববেন পাশাপাশি। যেহেতু উচ্চ আদালতের ওপর এখনো মানুষের আস্থা রয়েছে, তাই আশা করি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা অতিস্বল্প সময়ের মধ্যে উদ্যোগ নিয়ে বাদল ফরাজীকে মুক্ত করে দেবেন।

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads