• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গারা

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গারা

  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০১৯

আর কে চৌধুরী

 

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে ১২ লাখ অতিক্রম করেছে রেকর্ডসংখ্যক সন্তান জন্মদানের সক্ষমতার কারণে। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু এ জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা ২০ মাস আগে যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তাদের মধ্যে ৫০ হাজার নারীই ছিল সন্তানসম্ভবা। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর আরো লক্ষাধিক নারী সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

মিয়ানমারের রাখাইনের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর আশঙ্কা, রোহিঙ্গাদের উচ্চ জন্মহার অব্যাহত থাকলে একসময় নিজ দেশেই তারা পরবাসী হয়ে পড়বে। যে কারণে মিয়ানমারের বর্মি সেনা ও বর্মি শাসকদের রাখাইন জনগোষ্ঠীর মানুষ বিদেশি দখলদার বলে ভাবলেও রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে তাদের ধারণা আরো নাজুক। গত ২০ মাসেই টেকনাফের মানুষ এই অপ্রত্যাশিত অতিথিদের সম্পর্কে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ শিশু। বিপুল এই জনস্রোতের পরিষেবা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। ক্রমাগত অপরাধকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ জন্মহার গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণকে  রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের অধিকাংশই মনে করে ‘পাপকাজ’। তারা কোনো ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। পাশাপাশি রয়েছে বাল্যবিয়ের প্রচলন। কক্সবাজারবাসীর বক্তব্য,  রোহিঙ্গাদের অবাঞ্ছিত উপস্থিতিতে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। রাতে ঘুম হয় না ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। পাহাড়-পর্বত, ফসলি জমি সব রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। দিনের পর দিন তাদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি তাদের অপরাধের মাত্রাও বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের পর্যটনস্বর্গ কক্সবাজারের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এ জেলার পাহাড় ও বনভূমি অস্তিত্ব হারাচ্ছে।  রোহিঙ্গাদের মাদক-সংশ্লিষ্টতায় বিপর্যস্ত হচ্ছে দেশ। এ হুমকির মোকাবেলায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিকদের  সে  দেশে  ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে হেলাফেলার অবকাশ থাকা উচিত নয়।

জাতিগতভাবে নিধনের উদ্দেশ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী  রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে গত কয়েক দশক ধরে। কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর  থেকে অভিযানের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী  রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে নির্মমভাবে। সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার  রোহিঙ্গা, ধর্ষণের শিকার হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী। সহিংসতার ঘটনায় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই আরো অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে  তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং  রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্বসম্প্রদায়। চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা শুরু হয়নি। আশার কথা হলো, এখনো আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে তৎপর রয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনীতিকরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া সফরে এসেছেন সুইজারল্যান্ডের  প্রেসিডেন্ট অ্যালেইন বারসেত, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইইউ প্রতিনিধি দল। রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তদারকি করার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করেছে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ঘনীভূত হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে।

আমরা চাই, শুধু বৈঠক আর আলোচনাতেই যেন তৎপরতা সীমাবদ্ধ থেকে না যায়। প্রস্তুতিমূলক সব কাজ অতি দ্রুত সম্পন্ন করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। অন্যদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার পাশাপাশি সে দেশে তাদের নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ ও নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টিও জরুরি। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

লেখক : রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads