• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
শিশুশ্রম একটি মারাত্মক অপরাধ

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

শিশুশ্রম একটি মারাত্মক অপরাধ

  • প্রকাশিত ২০ মে ২০১৯

মো. রাশেদ আহমেদ

 

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আগামী দিনে জাতির কাণ্ডারি। বর্তমানে আমাদের দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, যার মধ্যে ৪৫ ভাগ শিশু। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু। আঠারো বছরের কম বয়সী সবাইকে সাধরণত শিশু বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তাদের তিনভাগে বিভক্ত করার প্রচলন আছে।  যেমন ১ থেকে ৫ বছরকে বলা হয় শৈশবকাল, ৬ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বাল্যকাল এবং ১১ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বলা হয় কৈশোরকাল।

শিশুশ্রম নিঃসন্দেহে একটি মারাত্মক অপরাধ। কিন্তু আমাদের দেশে এই অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এমন কোনো কর্মক্ষেত্র নেই যেখানে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। এমনকি ইটভাঁটা, দালান তৈরি, ইলেকট্রিকের কাজ, গাড়ির ড্রাইভার, শিল্প-কারখানাসহ অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গাড়ির হেল্পপার থেকে শুরু করে পরিচালনার দায়িত্বে শিশুদের বেশি চোখে পড়ে। যার ফল হিসেবে প্রতিনিয়ত ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। বর্তমানে অধিকাংশ বাড়িতে শিশুদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। তারা একটু-আধটু ভুল কাজের জন্য চরম নির্যাতনের শিকার হয়, এমনকি তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমাদের দেশে দালালবাজ অর্থাৎ কুচক্রী লোকের অভাব নেই। তারা তাদের সুবিধা আদায়ের জন্য শিশুদের, অর্থাৎ পথশিশুদের ব্যবহার করছে প্রতিনিয়ত। যার ফলে শিশুরা মাদক পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আমাদের দেশে পথশিশু প্রায় ১১ লাখ। তার মধ্যে ৭৫ শতাংশ বাস করে রাজধানীতে। তাদের ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশের ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ১৯ শতাংশ শিশু বিভিন্ন কারণে গ্রেফতারের শিকার হয়। এ ছাড়া মেয়েশিশুরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হয়। যার ফলে শিশুরা তাদের নৈতিকতা ভেঙে গড়ে তুলছে নতুন নতুন গ্যাং পার্টি, যা বর্তমানে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। তারা এখন গুম, খুন, ধর্ষণসহ মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পরতে পিছপা হচ্ছে না।

জাতীয় শ্রম আইন ২০১৬ অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোন প্রকার কাজে লাগানো যাবে না এবং ১৪ বছরের উর্ধ্বে বয়সী শিশুদের  দৈনিক ৫ ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে এই আইনকে তোয়াক্কা করা হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে শিশু শ্রমের পেছনে দায়ী কারা? বর্তমানে বাংলাদেশে ৪ কোটি লোক দরিদ্র যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৫%। বাংলাদেশে  গরীব লোকেরা সংসার চালানোর জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে অপরিপক্ব সন্তানকে উপার্জনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। যার ফলে স্কুল ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে করতে বাধ্য হয়। আর এভাবেই হাজারো শিশু জীবিকার তাগিদে জড়িয়ে পড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রায় ৭ লাখ শিশু তাদের ন্যায্য মজুরি থেকেও বঞ্চিত। বাংলাদেশে এখন সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু বিভিন্ন কাজে কর্মরত আছে, যার মধ্যে ১৭ লাখ শিশু রয়েছে যাদের শিশুশ্রমের আওতায় পড়ে। কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে ১২ লাখ ৮০ হাজার। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে।

শিশুশ্রম বন্ধ ও তাদের মানসিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক, সচেতনতা। এ ছাড়া সরকারের উচিত দরিদ্র শিশুদের বিশেষ তহবিলের আওতায় আনা, যাতে তারা খুব সহজে যে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। অপরদিকে শিশুদের অপরাধপ্রবণতা কমানোর জন্য সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারকে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গী ও স্কুল প্রতিষ্ঠানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পিতা-মাতার উচিত তাদের সন্তানদের পেছনে পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করা। কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে পিতা-মাতা অত্যন্ত ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের সন্তানদের যত্ন করার সময় হয় না। যার ফলে শিশুরা বিপদগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা ও ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে আমি মনে করি। আর এভাবে শিশুদের অপরাধপ্রবণতা কমানো সম্ভব।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া                                                            

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads