• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কৃষিপ্রধান দেশে অবহেলিত কৃষক

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

কৃষিপ্রধান দেশে অবহেলিত কৃষক

  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০১৯

ইমরান হোসাইন

 

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। মানবজাতির আদিমতম পেশা হচ্ছে কৃষি। দেশের খাদ্য জোগান দেন কৃষকরা। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং কৃষিখাতের মাধ্যমে ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন অপরিহার্য। কৃষি ও কৃষক আমাদের প্রত্যেকেরই মানুষের শেকড়ের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে মিশে আছে। কিন্তু শেকড়কে আমরা ভুলে যাই অতি সহজে। আমাদের অধিকাংশ মানুষের বাপ-দাদার পেশাও কৃষি। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চাবিকাঠি হচ্ছে এদেশের কৃষক সমাজ। কৃষক শ্রম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, আপন সন্তানের মতো লালনপালন করে ফসল ফলায়। শস্যের যত্ন করেন, সার-কীটনাশক দেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের ইচ্ছামত যত্ন নেন। কোনো কিছু কষ্ট মনে না করে মাঠে কাজ করেন আমাদের দেশের কৃষকরা। তবু ভালোবাসা আর কষ্টমিশ্রিত কৃষকরা স্বপ্ন দেখেন ফসল নিয়ে। কৃষক শব্দটির সঙ্গে কষ্টের অনেক মিল। কিন্তু যখন কোনো ফসল উৎপাদন করেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, তখন কৃষকদের কী অবস্থা হচ্ছে! একটুও ভেবে দেখেছি কি আমরা?

এবার ধানের দাম একেবারেই নেই। প্রতি মণ ধানের দাম থেকে প্রতি শ্রমিকের মজুরির দামি বেশি। বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি মণ ধান ঘরে তুলতে প্রায় হাজার টাকার উপরে খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করছেন তার অর্ধেক দামে। এতে করে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য দেওয়া উচিত। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষকের কষ্ট সারা জীবন। আমরা কখনো ভাবি না আমাদের জীবনে তাদের কত অবদান রয়েছে। একজন কৃষক জমিতে ফসল ফলান অনেক শ্রম ও ঘাম ঝরিয়ে। চূড়ান্ত ফল মিলে ফসল প্রাপ্তিতে; কিন্তু সেই দামও সঠিকভাবে তারা পান না। কৃষক যে ফসল ফলাচ্ছেন, আমরা কি তার ন্যায্যমূল্য দিচ্ছি! কিন্তু মাঝখানের মহাজনরা কৃষকের ফসল কম দাম দিয়ে কিনে শহরে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এমনটি চলতে থাকলে আমাদের উন্নয়ন হবে কী করে! কষ্ট করছেন আমাদের কৃষকেরা, সুখ মিলছে মহাজনের। সেটা আবার কোনো বিনিয়োগ, অবদান ও কষ্ট ছাড়াই! এর ফলে কী হচ্ছে? উৎপাদনকারী কৃষকদের ঠকানো হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যও দেওয়া হচ্ছে না। এমনটি চলতে থাকলে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এদিকে দিশেহারা কৃষক ধানের দাম না পেয়ে রাগে-দুঃখে নিজের পাকা ধানক্ষেতে নিজেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক সিকদারের ক্ষেতে আগুন দেওয়ার সেই ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ধানের ন্যায্যমূল না থাকায় মনের দুঃখে পাকা ধানে আগুন দিয়েছেন তিনি। এই কৃষির ওপর চলে কৃষকের জীবন, তার পরিবার। সারা বছরের খরচ, এমনকি কৃষকের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ অন্যান্য আরো অনেক খরচ। এতে করে যদি কৃষক সঠিক দাম না পান, তা হলে তাকে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। জীবন-জীবিকার জন্য এদেশের জনগণ ও অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃষি উৎপাদন বিপর্যস্ত হলে দেশের সামাজিক অর্থনীতি বিপন্ন হয়ে পড়বে। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আমাদের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। কৃষকের উন্নতি মানে আমাদের দেশের উন্নতি। কৃষকের ক্ষতি মানে দেশ ও দশের ক্ষতি। এই উপলব্ধি থেকে সরকারকেই এখন এগিয়ে আসতে হবে বাংলার কৃষকদের বাঁচাতে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিয়া সরকারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads