• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই

  • প্রকাশিত ০২ জুন ২০১৯

রুমান হাফিজ

 

 

জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই আমাদের কোথাও না কোথাও যেতে হয়। সেটা হতে পারে গ্রাম, সদর, জেলা কিংবা শহর। আর এজন্য আমাদের চড়তে হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, মোটরবাইক অথবা সাইকেলে। কিন্তু কোনোভাবেই কি নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আবার নিরাপদেই ফিরে আসতে পারব?

বিশেষ করে ঈদ এলে আমাদের সবারই যাতায়াত করতে হয় দূরপাল্লার যানবাহনে। এতে আমাদের চিন্তার রাজ্যটা আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। কখন না দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। জীবন যেমন সত্য, মৃত্যুও তেমনি অমোঘ। কিন্তু সেই মৃত্যুর কারণ যখন সড়ক দুর্ঘটনা হয় তখন কষ্টের শেষ থাকে না। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেশের কোথাও না কোথাও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর আমরা দেখতে পাই। ইদানীং সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা যেন বেড়ে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে চালকদের বেপরোয়া চালনা, বেশি মুনাফা লাভের মানসিকতা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সড়কপথগুলোর বেহাল অবস্থা, ট্রাফিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা, আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার অভাব, সর্বোপরি দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তানে প্রতি ১০ হাজার গাড়ির বিপরীতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হয় ১৯ জনের, ভারতে ২৫ জনের। অথচ বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার গাড়ি ৬০ জনের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়! এ-রকম সমীক্ষা বহু দেওয়া যাবে। অতীতেও নানা জরিপ, গবেষণা প্রতিবেদন জনসমক্ষে এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যে তিমিরে ছিলাম, সেই তিমিরেই আছি।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে দরকার টেকসই ও উন্নত মানের সড়ক নির্মাণ, দক্ষতা যাচাই করে গাড়িচালকদের লাইসেন্স প্রদান, প্রশিক্ষিত ট্রাফিক পুলিশসহ ট্রাফিক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সর্বস্তরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প যানবাহন তথা রেল, লঞ্চ ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা। সর্বোপরি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং এর বাস্তব প্রয়োগ এ মুহূর্তে খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। এখনি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই বাড়তে থাকবে, আর এটাই স্বাভাবিক। সড়ক দুর্ঘটনার পর দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস পাওয়া যায় এবং তা দেওয়াও হয়, তবে সব ক্ষেত্রে নয়। কিন্তু দুর্ঘটনাকবলিত পরিবারগুলোতে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা কি কখনো শুকায়? আর যারা এসব দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করে তাদের দায়িত্ব কে নেবে? আজ পর্যন্ত তাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি।

এই অপূরণীয় ক্ষতির যেমন কোনো সমাধান নেই, তেমনি সে ক্ষতিপূরণ কেউ দিতেও পারবে না। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাস-মালিক সমিতি এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতি— এই ত্রিপক্ষীয় সংস্থা আন্তরিক হলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের সুনজর দেওয়া জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সাধারণ নাগরিকদেরও সচেতনতা কাম্য। আমরা সবাই যদি সক্রিয় ও সচেতন হই, তাহলেই কেবল সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সময়ের ব্যাপারমাত্র। আর কারো যেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রাণহীন সড়কের বুকে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পাত-পা বিচ্ছিন্ন না হয় কিংবা প্রাণহানি না ঘটে। সেটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা হওয়া উচিত। সরকারের পাশাপাশি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, চাই নিরাপদ বাহন। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক কোনো অপমৃত্যু নয়। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads