• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পথশিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

প্রতীকী ছবি

মুক্তমত

পথশিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

  • আসিফ হাসান রাজু
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৯

শহরে চলতে-ফিরতে চোখে পড়ে কিছু জীর্ণশীর্ণ, খালি পায়ে ময়লা পোশাক পরিহিত শিশুদের। বিশেষ করে ফুটপাত, পার্ক, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনালে এদের দেখতে পাওয়া যায়। অবহেলা, অনাদরে, খেয়ে না-খেয়েই তাদের দিন কাটে। এরা আমাদের সমাজে পথশিশু হিসেবে পরিচিত। এদের নেই থাকার মতো কোনো ঘর, নেই ন্যূনতম বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার। আমাদের দেশে প্রায় ২০ লাখের অধিক পথশিশু রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এদের অনেক পরিমাণে দেখা যায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে পথশিশুদের চোখে পড়ে। তারা অনেক সময় দলবেঁধে ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে পার্কে, রাস্তার জ্যামে ফুল বিক্রি করে, অবার কেউ ভিক্ষা করে। সারা দিন এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরির পর অধিকাংশ পথশিশু রাতে ঘুমায় ফুটপাতে, পার্ক অথবা খোলা আকাশের নিচে। এদের জীবনে নেই কোনো স্বপ্ন। পথশিশুদের অধিকাংশের বয়স ৬ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। যে সময়টা ছিল তাদের বই-খাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়া, জ্ঞানার্জন করা, খেলাধুলা করে সময় পার করার, কিন্তু আজ তারা বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার পর্যন্ত পাচ্ছে না।

আমাদের দেশে পথশিশু সৃষ্টির পেছনে অন্যতম কারণ দারিদ্র্য। দেশে গত দশক থেকে জিডিপির হার বেড়েই চলেছে। সঙ্গে বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। তবে বাস্তবিক দরিদ্রতার পরিমাণ প্রত্যাশিত হারে কমেনি। সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রামের (সিপ) প্রতিবেদন বলছে, পথশিশুদের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ শিশু খোলা স্থানে মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে তাদের দেখার কেউ নেই। এ ছাড়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ৭৫ শতাংশ শিশু অসুুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না। এ প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট, পথশিশুরা কি অমানবিক জীবনযাপন করে। তাদের নিয়ে সারা দেশে বেশকিছু বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন কাজ করলেও তা অত্যন্ত নগণ্য। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, পথশিশুদের একটি বড় অংশ আসে দারিদ্র্য, ‘ব্রোকেন ফ্যামিলি’ থেকে এসেছে। যেখানে দারিদ্র্য, বাবা-মায়ের বহু বিবাহ, নদীভাঙন, ভূমিহীনতা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি অন্যতম কারণ। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে এদের বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৫১ ভাগ শিশু নানা ধরনের অশ্লীল কথার শিকার, শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয় মেয়েশিশুরা। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার। যা আমাদের সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত। আন্তর্জাতিক শিশু সনদ, শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টির পাশাপাশি বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ছাড়া শিশুদের সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে এসব সনদ ও আইনে।

কিন্তু তার বাস্তবিক রূপ খুব কমই দেখা যায়। ফলে সরকারকে এখন এসব পথশিশুর কথা নতুন করে ভাবতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি তারা যেন তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারটুকু পায় সেদিকে নজর দিতে হবে। আর কোনো পথশিশু যেন পথে বসবাস না করে তার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের এখনি সময়।

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads